শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গহিরা সৈকত

স্থায়ী বেড়িবাঁধের অভাবে ঘরহারা শতাধিক পরিবার

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গহিরা সৈকত

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় গহিরা সমুদ্রসৈকত দেশের অন্যতম দীর্ঘ নান্দনিক সৈকত। কিন্তু এ সৈকত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা সমুদ্রসৈকত দেশের অন্যতম দীর্ঘ একটি নান্দনিক সৈকত। আয়তনের দিক থেকে পারকি সৈকতের চেয়ে অন্তত দশগুণ বড় এ সৈকত যেন আরেকটি মিনি কক্সবাজার। উত্তরে পারকি সমুদ্রসৈকত, দক্ষিণে শঙ্খনদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ গহিরা সৈকত যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। এক সময় বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এ সৈকত এলাকা দেশ-বিদেশে পরিচিত ছিল কালোবাজারির স্পট হিসেবে। তখন এ এলাকা চোরাচালানের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করত দেশের বড় বড় কালোবাজারিরা। তবে স্থানীয় সাধারণ মানুষের প্রধান পেশা এখনো সাগরে মাছ শিকার এবং চাষাবাদ। সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাছের ঘাটটি রয়েছে এ গহিরা সৈকতে। ‘উঠান্যার ঘাট’ নামে পরিচিত এ ঘাটে ইলিশ মৌসুমে চার শতাধিক ইজ্ঞিনচালিত সাম্পান মাছ ধরে সাগরে। পাশাপাশি এ সৈকতকে ঘিরে রয়েছে আরও তিনটি মাছঘাট। পর্যটনের বেশ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে তার কোনো ছোঁয়া লাগেনি এখনো। বঙ্গোপসাগরের ভাঙনের কবলে পড়ে গহিরা সৈকতের হাজার হাজার একর আবাসিক ও চাষাবাদের জায়গা বিলীন হয়েছে, এখনো হচ্ছে। উপকূলের স্থায়ী বেড়িবাঁধের বেশকিছু অংশে পাথর বা ব্লকের বাঁধ না থাকায় প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে এখানকার দক্ষিণ গহিরার মানুষকে। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের কারণে এখানকার অনেক পরিবারকে হতে হয়েছে উদ্বাস্তু। এরপর আরও বহুবার ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটা-বাড়ি হারাতে হয়েছে অন্তত শতাধিক পরিবারকে। এখনো অনেককেই অন্যের ভিটা-বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হচ্ছে। অবস্থাপন্ন কেউ কেউ চট্টগ্রাম শহরে এবং দূরবর্তী কোনো গ্রামে জমি কিনে নিয়েছেন আশ্রয়। কিন্তু সহায়-সম্বলহীন অনেক পরিবার বেড়িবাঁধের কোলঘেঁষে ঝুপড়ি বেঁধেই রয়ে গেছেন। পরিকল্পিতভাবে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিস্তীর্ণ সৈকতকে পর্যটন শিল্পের আওতায় আনা গেলে স্থানীয় অর্থনীতি দ্রুত শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন এলাকার জনপ্রতিনিধি ও মৎস্যজীবীরা। সরেজমিন জানা যায়, চলতি বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে গহিরা সৈকতের শত শত ঝাউগাছ। স্থানীয়রা জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের আদলে গড়ে ওঠা দেশের অন্যতম এ সমুদ্রসৈকতে গত এক দশকে ভাঙন ও নিধনের শিকার হয়েছে প্রায় অর্ধ লাখ ঝাউগাছ। ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সমুদ্রসৈকতটি হারাচ্ছে স্রষ্টা প্রদত্ত সৌন্দর্য অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে উপকূলীয় মানুষ। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্যও। সৈকতের পরুয়াপাড়া, উঠান্যার ঘাট, বাইগ্যার ঘাট, বার আউলিয়া হয়ে শঙ্খনদীর মোহনা পর্যন্ত সমুদ্রতীরের প্রায় শতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে গেছে। কোনো কোনো গাছ আগেই কেটে নেওয়ায় শুধু গোঁড়াটিই পড়ে আছে। এক বছর আগেও যেখানে ঝাউগাছের সারি ছিল, সেখানে ঝাউগাছের চিহ্নও নেই।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জানে আলম জানান, পারকী থেকে গহিরা পর্যন্ত অব্যাহত ভাঙনে গত দুই বছরে স্থানভেদে এক কিলোমিটারেরও বেশি বালিয়াড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সাগরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পরুয়াপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা ঝাউবন। অর্ধেকে নেমে এসেছে খৌর্দ্দ গহিরা তথা উঠান্যার ঘাটের ঝাউবন। তবে বেড়িবাঁধের যে অংশে এখনো পাথরের ব্লক পড়েনি দ্রুত একনেকে তা বাজেট পাস হবে বলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি আশ্বস্ত করেছেন।

এ এলাকার প্রতি তার আলাদা টান রয়েছে। তাই আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হয়ে যাবে।

উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো ট্যুরিজম’ প্রকল্পের আওতায় গহিরা সমুদ্রপাড়ের পাঁচ হেক্টর এলাকায় ঝাউগাছ লাগানো হয়। গত সাত বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানটি বিলীন হতে হতে আধা হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ায় ঝাউবনটি রক্ষা করা যাচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর