সোমবার, ২০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

তিস্তা ব্যারাজ ঘিরে অশনিসংকেত

৫২টির মধ্যে ৮ গেট বন্ধ, পলির আধার ও প্রধান সেচ খাল হুমকিতে, রাউডারের যন্ত্রাংশ চুরি

নজরুল মৃধা, রংপুর

তিস্তা ব্যারাজ ঘিরে অশনিসংকেত

তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ডালিয়া ব্যারাজকে ঘিরে দেখা দিয়েছে অশনিসংকেত। ব্যারাজের ৫২টি গেটের মধ্যে ৮টি গেট বালুতে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে খোলা হচ্ছে না। উজানের ঢলে যে কোনো মুহূর্তে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। অপরদিকে তিস্তা ব্যারাজের পলির আধার (সিলট্রাফ) ও প্রধান সেচ খাল হুমকির মুখে পড়েছে। নিজস্ব ড্রেজিং মেশিন না থাকা, প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ না পাওয়া ও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে তিস্তা ব্যারাজের সিলট্রাফে অর্থাৎ পলির আধার থেকে নিয়মিত পলি উত্তোলন করা হচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর ২০ লাখ টন পলি জমা হচ্ছে এ আধারে। একই সঙ্গে পলির আধার থেকে ওই পলি ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান সেচ খালে গিয়ে পড়ছে। ফলে প্রধান খালের পানির স্তর ৩ ফিট কমে গিয়ে সঠিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম কাজ করছে না। ব্যারাজের গেট ওঠানো-নামানো হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এ ছাড়া ব্যারাজে মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ উঠেছে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশের সর্ববৃহত এ ব্যারাজটি। ব্যারাজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর তিস্তা নদী প্রায় ৫ কোটি মেট্রিক টন পলি বহন করে। এ পলির কারণে ডালিয়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। অপরদিকে সেচ প্রকল্পের জন্য প্রধান খালে পানি প্রবেশের উৎস মুখে ৪৫ হেক্টর এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পলির আধার অর্থাৎ সিলট্রাফ। উজান থেকে নেমে আসা পলির একটি বিশাল অংশ এই সিলট্রাফে প্রবেশ করছে। নিজস্ব ড্রেজিং মেশিন না থাকা, প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ বরাদ্দের অভাবে এ সিলট্রাফ নিয়মিত ড্রেজিং করা হয় না। গত ৩ বছরে সিলট্রাফ থেকে কোনো পলি উত্তোলন করা হয়নি। ক্রমাগত পলি পড়ার কারণে প্রধান খালের নিম্নাংশ ভরাট হয়ে আড়াই থেকে তিন ফুট পানির স্তর কমে গেছে। ফলে প্রধান খালের পানি দূষণ হয়ে বিভিন্ন সংযোগ খালে গিয়ে পড়ায় সেচ প্রকল্পটিও হুমকির মুখে রয়েছে। প্রধান খালের পানির স্তর ৩ ফিটের মতো কমে গেলেও খালটি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। আগামী ১০ বছরের মধ্যে অকার্যকর হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে ব্যারাজের ৫২টি জলকপাট দিয়ে একসঙ্গে পানি নিঃসরণ ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে চার লাখ কিউসেক। এর চেয়ে বেশি পানি বা ঢল হলে ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাসের ফিউজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়ে বিকল্প পথে ঘুরে গিয়ে বাড়তি পানি আবার নদীতে পড়ে। চলতি বছরের ১২ ও ১৩ জুলাই উজানের ঢল এসেছিল। ঢলে পানি প্রবাহের সঙ্গে বালু ও পলি এসে ব্যারাজের সম্মুখ ও পেছনের ৮টি গেট ভরে গেছে।

 ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্যারাজটি। সম্প্রতি ব্যারাজের অটোমেশন অপারেটিংয়ের সাতটি রাউডারে থাকা অ্যান্টেনার ছয়টি চুরি হয়ে গেছে। এ জন্য থানায় মামলা করা হলেও চুরি যাওয়া অ্যান্টেনা এখনো উদ্ধার হয়নি।

তিস্তা ব্যারাজ যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুজ্জোহা জানান, ব্যারাজের পানি নিষ্কাশনের জন্য ৫২টি গেট খুলে রাখা হতো। এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেচ ক্যানেলের গেটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পলি জমাট থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড্রেজার মেশিন না পাওয়ার কারণে পলির আধার থেকে বালু উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। আমারা পলি উত্তোলনের জন্য ড্রেজার মেশিন চেয়েছি। মেশিন পেলেই পলি উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর