শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজস্ব ফাঁকি ধরতে অ্যাকশনে এনবিআর

কর ফাঁকিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত ও অযাচিত হয়রানি না করার নির্দেশ

রুহুল আমিন রাসেল

রাজস্ব ফাঁকি ধরতে অ্যাকশনে এনবিআর

এবার রাজস্ব ফাঁকি ধরতে অ্যাকশনে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। তবে ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের অযাচিত হয়রানি না করে কর ফাঁকিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন ও নজরদারি বাড়াতে কর, ভ্যাট এবং শুল্ক গোয়েন্দাকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। করোনাকালের বাজেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের টার্গেট অর্জনে জোর তৎপরতা শুরুর তথ্যও দিয়েছে এনবিআর সূত্র। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সবার আগে সরকারি-বেসরকারি খাত মিলে করোনাভীতি দূর করে অর্থনীতি সচল করতে হবে। রাজস্ব ফাঁকির দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে ভালোই জানে এনবিআর। বিশেষ করে সেবা খাতে কর ফাঁকি বেশি হয়। পেশাজীবীদেরও ফাঁকি ধরতে হবে। অগ্রিম আয়করের পরিধি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। যদিও কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর কারণে এনবিআরের অটোমেশন হচ্ছে না। তথ্যমতে, মহামারী করোনাকালে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবার ভিন্ন মাত্রায় অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে এনবিআর। রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আদায়কারী এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ১ জুলাই শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথমেই তিন রাজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল- সিআইসি, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে সরাসরি নিজের তত্ত্বাবধায়নে রেখে পৃথক পৃথক নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং এনবিআর চেয়ারম্যান। ওই সূত্র বলছে- কর, শুল্ক ও ভ্যাট গোয়েন্দার তিন মহাপরিচালককে দেওয়া বিশেষ নির্দেশনায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে। আগের ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে সর্বক্ষেত্রে গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা। প্রাতিষ্ঠানিক অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত বাড়াতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ। কর, ভ্যাট ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অযাচিত হয়রানি করা যাবে না। একই সঙ্গে বড় বড় কর ফাঁকিবাজকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এনবিআর সূত্র বলছে- লাঠি নয়, কাজের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। কেউ যেন রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ না পায়। ফাঁকি দেওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য নজর দিতে গিয়ে কোনো ধরনের দুর্বলতা ও জটিলতা থাকলে তাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। এক কথায়- ফাঁকিমুক্ত রাজস্ব আহরণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কর, ভ্যাট ও শুল্কসহ অন্যান্য আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কৌশল নির্ধারণের নির্দেশনাও দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তথ্যমতে, মহামারী করোনাকালে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বিদায়ী অর্থবছরে টার্গেট অর্জনের ধারেকাছেও যেতে পারেনি এনবিআর। একে সক্ষমতার ঘাটতি ও চাপিয়ে দেওয়া বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে রাজস্ব আদায় হবেই।

 তবে মহামারী করোনাভাইরাসের মতো পরিস্থিতিও বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট- বিল্ড বলেছে, চলতি বাজেটে রাজস্ব আয়ের ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বিদায়ী ২০১৯-২০ বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। এটা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এ লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা উচ্চাভিলাষী।

এনবিআরের সর্বশেষ সাময়িক হিসাবে- বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। মোট ঘাটতি ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজস্ব আহরণে এমন নাজুক অবস্থা আর কখনো দেখা যায়নি। সূত্রমতে, বিদায়ী অর্থবছরে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও নেতিবাচক বা ঋণাত্মক (গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম আয়) হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘উন্নয়ন উন্বেষণ’ বলেছে- ব্যাংকিং খাত থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছে। আগেই তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকিং খাতের অবস্থা আরও নাজুক হবে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কর ফাঁকি, কর জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ট্রান্সফার প্রাসিং সেলের অকার্যকারিতার কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে অনেক কর আদায় সম্ভব হচ্ছে না। দেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকেও অনেক কর আদায় করা যেত। এগুলো করা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর