শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

এক লাখ দোকানে বসছে ইএফডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাট আদায় ও ফাঁকি কমাতে সারা দেশের এক লাখ দোকানে বসছে ইলেকট্রনিক্স ফিজিক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন। আসছে আগস্ট মাসেই মুদি দোকানসহ বাছাই করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে রাজধানীর বড় বড় শপিংমলগুলোতে ইএফডি মেশিন বসানো হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।  এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে পাইলট হিসেবে ১ লাখ ইএফডি মেশিন দিয়ে ভ্যাট আদায় শুরু হবে। এরপর প্রকল্পটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে এটি সম্প্রসারণ করা হবে। কাগজের পেমেন্ট ঝুঁঁকিপূর্ণ বলে আমরা ইএফডি তথা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির দিকে যাচ্ছি। আস্তে আস্তে এটা বাড়ানো হবে।  এনবিআর জানায়, ইএফডি হচ্ছে একটি কম্পিউটারাইজড যন্ত্র। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পণ্য বেচাকেনায় দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি ব্যবহার করা হয়। রাজস্ব বিভাগ এটির মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন বা কেনাবেচায় সরাসরি নজর রাখতে পারে।

ফলে ভ্যাট ফাঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। এ ছাড়া করোনাকালীন সহজে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে এনবিআর।জানা গেছে, মূলত করোনা মহামারীর এ সময়ে নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতেই বসানো হচ্ছে ইএফডি মেশিন। যদিও করোনার আগেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে চায়না কোম্পানি ৫০০ ইএফডি মেশিন সরবরাহ করেছিল। করোনা মহামারী শুরু হলে এই প্রক্রিয়া থমকে যায়। তবে এবার চূড়ান্তভাবে এসব ইএফডি মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আগামী মাসেই তারা ইএফডি বসানোর কাজ শুরু করবে।

রাজধানীর পাশাপাশি বড় শহরগুলোতে প্রাথমিকভাবে ইএফডি স্থাপন করা হবে। আর পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ১ লাখ ইএফডি মেশিন বসাবে এনবিআর। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই মেশিন বসানোর কথা ছিল। যন্ত্রটি ইতোমধ্যে দেশে চলেও এসেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সফটওয়্যার সন্নিবেশিত করার জন্য চীনা প্রকৌশলীরা করোনা ভাইরাসের কারণে আসতে না পারায় ভ্যাট মেশিন চালু করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে স্বল্প সময়ে ও সহজে ভ্যাট পরিশোধে ই-পেমেন্ট সিস্টেমও চালু করেছে এনবিআর। এই প্রক্রিয়ায় ভোক্তা ও সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে আদায় হওয়া ভ্যাটের টাকা অনলাইন বা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে জমা হবে। ফলে অনলাইনে ভ্যাটের রিটার্ন দাখিল ও টাকা সরকারি কোষাগারে সরাসরি পরিশোধের এই সুবিধায় হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।

এনবিআর সূত্র মতে, সারা দেশে ভ্যাট অনলাইনের আওতায় এ পর্যন্ত নিবন্ধন নিয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মাসে গড়ে একশ থেকে দেড়শ প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধন নিচ্ছে। তবে নিবন্ধন নিলেও সবাই প্রতি মাসে রিটার্ন জমা দেন না। গড়ে প্রতি মাসে ৪২ হাজার প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল করে। অনলাইনের বাইরেও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এখনো রিটার্ন জমা নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হয়। এক মাসের রিটার্ন পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হয়। তা না হলে জরিমানা ও সুদ নেওয়ার বিধান আইনে আছে। তবে চলমান মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে আগামী কয়েক মাস সুদ মওকুফ করেছে সরকার।

অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট রিফান্ডের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যও কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় কিছু সফটওয়্যার সেভাবে সাজানো হচ্ছে। এটাও ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভ্যাট অটোমেশনের বড় সংস্কার হিসেবে ভাবা হচ্ছে রিফান্ডকেও। অর্থাৎ ভ্যাটদাতারা নিয়ম অনুযায়ী যে রেয়াত সুবিধা পান, তা ফেরত পাওয়া। এটা এখনো ম্যানুয়াল বা প্রচলিত প্রথায় ফেরত পান ব্যবসায়ীরা। এতে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

কিন্তু অনলাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চেক অটোমেটিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। এর জন্য অফিসে আসতে হবে না। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ এটি সম্পন্ন হবে। আর আসছে ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার তথ্য দিয়েছে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর