মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষায় ফ্লাইটের পর রিপোর্ট

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের বাসিন্দা দুবাইপ্রবাসী মো. ওমর ফারুক সরকারি নির্দেশনামতে ২৪ জুলাই নিবন্ধন ও ২৫ জুলাই নমুনা প্রদান করেন। ২৬ জুলাই বেলা ৩টায় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে রিপোর্ট নিতে আসতে বলা হয়। বাংলাদেশ বিমানে তার ফ্লাইট ছিল ২৭ জুলাই সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে। কিন্তু ২৭ জুলাই সকাল ১০টা পর্যন্ত তিনি করোনার রিপোর্ট পাননি। পরে ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি রিপোর্ট পান। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অনুরোধে এক ঘণ্টা ফ্লাইট বিলম্ব করায় বিমানে উঠতে সক্ষম হন তিনি। কেবল তিনি নন, এভাবে বিদেশগামী প্রায় ৩০০ যাত্রী নির্ঘুম রাত কাটিয়ে শেষ সময়ে করোনার রিপোর্ট হাতে পেয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে অন্তত ৫০ জন যাত্রী ফ্লাইট মিস করেন। ফ্লাইটের এক ঘণ্টা পরও অনেকে রিপোর্ট পান। গতকাল সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ছিল বাংলাদেশ বিমান এবং ৮টা ৩০ মিনিটে ছিল ইউএস বাংলার ফ্লাইট। গতকাল ভোর ৫টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক বিদেশযাত্রী হাতে কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সবাই রবিবার বেলা ৩টায় এখানে আসেন রিপোর্টের জন্য। রিপোর্ট না পেয়ে রাতভর এখানেই নির্ঘুম কাটান। অনেক যাত্রীই স্বজনদের মাধ্যমে লাগেজসহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অবস্থান করেন। এ সময় যাত্রীরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রক্রিয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিদেশগামীদের একটি পয়েন্টে টাকা প্রদান, নিবন্ধন, দুটি বুথে নমুনা প্রদান এবং একটি ল্যাবে পরীক্ষা করায় এখন অন্তহীন দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে দেশের রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের। যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার সাধারণ পর্যায়ে ২০০ টাকায় করোনার টেস্ট করাচ্ছে। আর রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

তবু অন্তহীন কষ্ট-ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আমাদের রিপোর্ট পেতে হচ্ছে। প্রবাসীদের সঙ্গে এটি কেমন আচরণ, কেমন হয়রানি!

আনোয়ারার নাজিম উদ্দিন নামে এক দুবাইপ্রবাসী বলেন, ‘সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে আমার ফ্লাইট। দুপুর ১২টায়ও রিপোর্ট পাইনি। কী করব জানি না।’ দুবাইপ্রবাসী হাটহাজারীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কফিলকে অনেক অনুনয় করে ভিসাটা নবায়ন করেছি। ঋণ করে টিকিট করেছি। এখন যদি যেতে না পারি তাহলে আমার সব শেষ!’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সারা রাত অনেক যাত্রী কষ্ট করেছেন, তা আমরা দেখেছি। গতকাল রাতে আমরাও অফিসে ছিলাম। মূল সমস্যাটা ছিল বিআইটিআইডিতে। সেখানে সার্ভার ডাউনের কারণে রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হয়। ফলে রবিবারের রিপোর্ট সোমবার সকালে পর্যন্ত দিতে হয়েছে।’

জানা যায়, প্রবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও পর্যটন কাজে বিদেশ যেতে সরকার কভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করেছে। বিদেশযাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এ সনদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ২৩ জুলাই থেকে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়। সনদটি নিতে হবে দেশের নির্দিষ্ট ১৬টি ল্যাব থেকে। চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে শুধু বিআইটিআইডি ল্যাবে। এর জন্য প্রথমে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টিকিট, ভিসা ও পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর জেনারেল হাসপাতালের দুটি বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব নমুনা পাঠানো হবে বিআইটিআইডি ল্যাবে। কিন্তু দুটি বুথে নমুনা সংগ্রহ করায় বিদেশগামীদের অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ২৩ জুলাই থেকে অসংখ্য প্রবাসীকে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে চট্টগ্রামে ৬৬৩ জন বিদেশযাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ পর্যন্ত ১১ জন প্রবাসীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর