মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
উপেক্ষিত করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি

শর্ত ভেঙে কোরবানির পশুহাটে কেনাবেচা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১৮টি পশুহাটের ইজারা দিয়েছে। ইজারার শর্তানুযায়ী ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ দিন হাট বসাতে পারবেন ইজারাদাররা। সে হিসেবে ২৮ জুলাই থেকে হাট বসার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই হাটে গরু-ছাগল আসা শুরু হয়েছে। চলছে কেনাবেচা। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ অনেক শর্তই মানছে না তারা।  সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি যে ১১টি অস্থায়ী হাট ইজারা দিয়েছে তার প্রতিটিতেই ইতিমধ্যে বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। এসব হাটে গরু-ছাগল বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া সংযুক্ত নকশা ও তফসিল বর্ণিত চৌহদ্দির বাইরে কোনো রাস্তায় এমনকি স্কুল-কলেজের সীমানায় হাট স্থাপনের জন্য খুঁটি বসানো হয়েছে। লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবের পাশে গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গায় পশুরহাট ইজারা দিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অথচ শেরেবাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গরু বিক্রির জন্য বাঁশের খুঁটি পোঁতা হয়েছে। সেখানে ব্যাপারীরা গরু বেঁধে বিক্রি করছেন।  এদিকে, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর, মেরাদিয়া, খিলগাঁওয়ের শাহজানাহানপুর ও  আফতাবনগর হাট ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটির হাটেই ইজারাদাররা শর্ত না মেনে রাস্তার ওপর, বাড়ির সামনে গরু-ছাগল রাখার জন্য বাঁশের খুঁটি পুঁতেছেন। নিয়ম ভেঙে এসব হাটে গরু-ছাগলও ওঠানো হয়েছে। এ ছাড়া হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিও উপেক্ষিত থাকছে। বিক্রেতাদের অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। হাটে নেই হাত ধোয়ার জন্যও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ছেলেরা হাটে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।  এদিকে এবার পুঁজি বাঁচানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যাপারীরা। শামীম হোসেন নামে এক ব্যাপারী সিরাজগঞ্জ থেকে গোপীবাগের হাটে ছয়টি বড় গরু এনেছেন। এর চারটি দেশি এবং দুটি বিদেশি শংকর জাতের। দেশি জাতের গরুর প্রতিটির দাম চাচ্ছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে। তিনি বলেন, এক বছর আগে এ গরু কিনেছি এক লাখ ৩০ হাজার টাকায়। এখন হাটে ক্রেতা বেশি না হলেও দু-একজন যা আসছেন তারা এক লাখ ৩০-৪০ হাজারের বেশি দাম বলছেন না।

এ জন্য পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব কিনা তা নিয়ে এখন শঙ্কায় আছি।

চুয়াডাঙ্গার গরু ব্যাপারী আবদুল বাতেন বলেন, করোনার কারণে এবার হাট জমা নিয়ে শঙ্কা আছে। তবে আমার মনে হয় যারা কোরবানি দিয়ে থাকেন তারা ঠিকই এ বছরও কোরবানি দেবেন। তাই দাম কম পাওয়া যাবে এমন মনে করি না। তবে ভারতীয় গরু ঢোকার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এদিকে গোপীবাগ অস্ট্রেলিয়ার হালিস্টিয়ান ফিজিয়াম জাতের একটি গরুর দাম হাঁকছেন ১০ লাখ টাকা। তবে এখন পর্যন্ত চার লাখ টাকা দাম উঠেছে বলে জানালেন ব্যাপারী। মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনার কারণে এবার হাটে ব্যবসায়ীরা গরু কম আনবেন। অন্য বছর এ হাটে এ সময়ে ১০ হাজারের মতো গরু থাকে, কিন্তু এবার পাঁচশর বেশি গরু এখনো আসেনি।

এ হাটে দেখা যায় কিশোররা দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বড় গরু দেখলেই তারা সেলফি তুলছে, আর হৈ-হুল্লোড় করে বেড়াচ্ছে। তাদের কারণে ব্যবসায়ীরা অনেকটা বিরক্ত।

রাজধানীর উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন রাজউকের আবাসিক প্রকল্প এলাকার খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, আফতাব নগর ও মেরাদিয়া বাজার হাটে গরু এনেছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে উত্তরা হাটে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গরু উঠেছে অন্তত ছয় হাজার। এ হাটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সুলতান আহমেদ জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যাপারীরা শুক্রবার থেকে গরু হাটে উঠাতে শুরু করেছেন। তবে এখনো বিক্রি আশানুরূপ জমেনি। সরকার নির্ধারিত বিধিবিধান মেনে সোমবার থেকে গরু বিক্রি শুরু হবে।

দনিয়া হাটে গতকাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার গরু উঠেছে। আর ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে হাটে। আশপাশের বাসিন্দারা কৌতূহলবশত হাটে ঘুরতে এসে পশু পছন্দ হলে অনেকে কিনে নিচ্ছেন। এর সংখ্যা খুবই কম। যাদের বাড়িতে রাখার জায়গা আছে, এমন গুটিকয়েক মানুষ গরু কিনেছেন।

এ ছাড়া গাবতলী স্থায়ী হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে পশু আসছে। বলা চলে, পশুতে হাট ভরে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বল্প পরিসরে হাটে উৎসুক মানুষের পদচারণা লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিক্রি তেমন নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর