বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

পরিত্যক্ত টেংরাটিলায় নতুন স্বপ্ন দেখছে এসজিএফএল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পরিত্যক্ত টেংরাটিলায় নতুন স্বপ্ন দেখছে এসজিএফএল

দুর্ঘটনার পর আগুন জ্বলছে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে -ফাইল ছবি

দিন দিন বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। শিল্পকারখানার চাহিদা মেটাতে বন্ধ রাখা হয়েছে আবাসিক সংযোগ। এ অবস্থায় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে চায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। নাইকোর অনিয়মে দগ্ধ সুনামগঞ্জের পরিত্যক্ত টেংরাটিলা থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন শুরু করতে চায় দেশের তেল ও গ্যাস উত্তোলনের পথিকৃৎ এসজিএফএল। এজন্য তারা ফেরত চায় ছাতক (টেংরাটিলা) গ্যাস ক্ষেত্রের ‘অপারেশনাল রাইটস’। এ নিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি. কর্মচারী লীগ ও কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। অপারেশনাল রাইটস ফিরে পাওয়ার প্রস্তাবটি ঈদের পর বোর্ডসভায় উত্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসজিএফএল। এসজিএফএল সূত্র জানান, ১৯৫৫ সালে পিপিএলের আওতাধীন সিলেট (হরিপুর) ও ছাতক গ্যাস ক্ষেত্র দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার ও উৎপাদনের সূচনা হয়। স্বাধীনতার পর পিপিএলের নতুন নামকরণ হয় বিপিএল। পরবর্তী সময়ে বিপিএলকে কোম্পানি আইনে ‘সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড’ নামে নিবন্ধন করা হয়। ১৯৮৪ সালে বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে ১৫.০৪ কোটি টাকায় সরকার সিলেট ও ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি এসজিএফএলের কাছে হস্তান্তর করে। এর পর থেকে ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রের খাজনা পরিশোধ করে আসছে এসজিএফএল। ১৯৬০ সালের জুলাইয়ে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে এ ফিল্ডের গ্যাস সরবরাহের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়। এসজিএফএল নিজস্ব জনবল দিয়ে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কূপটি থেকে দৈনিক ৪-৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করত।

 পরবর্তী সময়ে কূপ থেকে অত্যধিক পানি ও বালি আসায় ১৯৮৬ সালে স্থগিত করা হয় উৎপাদন।

সূত্র আরও জানান, বিগত বিএনপি সরকার আমলে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এসজিএফএলকে পাশ কাটিয়ে গ্যাস ক্ষেত্রটি বাপেক্স ও নাইকোকে হস্তান্তর করা হয়। এর পরই ২০০৩ সালে বাপেক্স ও নাইকোর মধ্যে জেভিএ চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তির আলোকে কূপ খনন শুরু হলে ২০০৫ সালের জানুয়ারি ও জুনে ব্লু-আউট সংঘটিত হয়। ওই সময় গ্যাস ক্ষেত্রটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে যায় দুই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ‘অপারেশনাল রাইটস’ না থাকায় গ্যাস উত্তোলনের জন্য এসজিএফএল পুনরায় গ্যাস ক্ষেত্রটিতে সাইসমিক জরিপ ও কূপ খনন কাজে যেতে পারেনি। দশম জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রটি এসজিএফএলের কাছে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করলেও এখনো সে সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি।

এদিকে টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের জন্য আন্তর্জাতিক আদালত নাইকোকে দায়ী করে রায় দেওয়ার পর গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে চাইছে এসজিএফএল। কোম্পানির কর্মকর্তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক আদালতের এ রায়ের পর কার্যকারিতা হারিয়েছে বাপেক্স-নাইকো জেভিএ চুক্তি। তাই গ্যাস ক্ষেত্রের মালিক হিসেবে এসজিএফএলের অপারেশনাল রাইটস ফিরে পেতে আইনি কোনো বাধা নেই।

এসজিএফএল সূত্র জানান, তাদের মালিকানাধীন ১০টি কূপ থেকে বর্তমানে দৈনিক ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। কিন্তু পাঁচটি কূপ দিয়ে প্রচুর পানি বের হওয়ায় যে কোনো সময় এগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে দৈনিক উৎপাদন কমে যাবে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ ২০০২ সালেও এসজিএফএলের এ ১০টি কূপ থেকে দৈনিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হতো। তাই নতুন কূপ খনন করা না গেলে কয়েক বছরের মধ্যেই সিজিএফএলের গ্যাস উৎপাদন তলানিতে ঠেকবে। এতে দেশে গ্যাস সংকট আরও প্রকট হওয়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন এসজিএফএলের কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) সভাপতি প্রদীপ কুমার শর্মা ও কর্মচারী লীগের সভাপতি মো. হারুন। তাই ছাতক ক্ষেত্র থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন করতে চায় এসজিএফএল।

এ ব্যাপারে এসজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী ইকবাল মোহাম্মদ নূর উল্লাহ জানান, ছাতক (টেংরাটিলা) গ্যাস ক্ষেত্র থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর কোম্পানির বোর্ডসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। অপারেশনাল রাইটস পেলেই এসজিএফএল টেংরাটিলায় কাজ শুরু করবে।

সর্বশেষ খবর