শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত বরিশালবাসী

সহায় সম্পদ রক্ষার দাবি

রাহাত খান, বরিশাল

নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত বরিশালবাসী

নদী ভাঙনে নিঃস্ব বরিশাল সদরের ৬ এলাকায় বাসিন্দারা। ছবিটি গতকাল সদরের ইছাগুড়া কালীগঞ্জ বাজার থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উজানের বন্যার পানির তীব্র স্রোতে বরিশাল সদরের ছয়টি স্থানে নদীভাঙন তীব্র হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলেও সাময়িক নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। নদীতে সব হারিয়ে দিশাহারা বরিশাল সদরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তাদের অনেকেই বসবাস করছেন অন্যের জমিতে কিংবা সরকারি রাস্তার পাশে। এখনো নদী তীরবর্তী মানুষ রয়েছেন চরম আতঙ্কে। বিশেষ করে সদরের চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়িতে কীর্তনখোলার ব্যাপক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে এলজিইডির পাকা রাস্তার একাংশ। এখন চারণ দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বসতভিটা ও লাইব্রেরি নদীগর্ভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে এবং স্থায়ী ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি। বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আপদকালীন এবং স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ। বরিশাল সদরের বেলতলা, চড়বাড়িয়া, লামছড়ি, আটহাজার ও হবিনগরসহ ৫টি পয়েন্টে কীর্তনখোলা এবং আড়িয়াল খাঁ নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ইছাগুড়া কালীগঞ্জ বাজার। লামছড়িতে কীর্তনখোলার ভাঙনে এলজিইডির অন্তত দেড়শ ফুট পাকা রাস্তা বিলীন হয়েছে। এখন চারণ দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বসতভিটা ও তার নামে প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরিসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি হুমকিতে রয়েছে। এখানে এর আগে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও একটি চরের কারণে ঢেউ আছড়ে পড়ে ভাঙছে লামছড়ি। এখন তারা ভাঙনরোধে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বেলতলা, চড়বাড়িয়া, আটহাজার এবং হবিনগর এলাকায়ও কীর্তনখোলার গর্ভে প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে সহায় সম্পদ।  এদিকে আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে বিপর্যস্ত সদরের ইছাগুড়া কালীগঞ্জ বাজার। সাম্প্রতিক সময়ে নদীভাঙনে সর্বহারা হয়েছে শত শত পরিবার। এখন তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমি ও সরকারি রাস্তার পাশে। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এখনো নদী তীরবর্তী মানুষের দিন কাটে আতঙ্কে। তারা ভাঙনরোধে দ্রুত স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। নদীভাঙনে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। ঈদের বন্ধে সদর আসনের ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রতিমন্ত্রী দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মধু। পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, বরিশাল সদরের ছয়টি পয়েন্টে নদীভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। কয়েকটি জায়গায় ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলে আপদকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিছু জায়গায় চর কেটে নদীর অপর পাশের ভাঙন প্রতিরোধ করতে হবে। ভাঙনের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে কীর্তনখোলা নদীর অনেক জায়গায় বাঁক কেটে সোজা করতে হবে। একই সঙ্গে ছয়টি স্থানে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা বলেন প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর