শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
আরডিএ

এক বছরেও শেষ হয়নি প্লট জালিয়াতি মামলার তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা এলাকার ৮টি সরকারি বাণিজ্যিক প্লট জালিয়াতির অনুসন্ধান চলে টানা ছয় বছর। এরপর গত বছরের ২ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বাদী হয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। কিন্তু প্রায় এক বছরেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। অভিযোগকারীরা বলছেন, ২০০৫ সালের চাঞ্চল্যকর এই প্লট জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পার হয়ে যায় প্রায় ছয় বছর। অভিযোগ শেষে মামলা হলেও তার তদন্ত শেষ হয়নি গত বছরেও। চাঞ্চল্যকর এই দুর্নীতির মামলাটির তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী। তিনি বলেন, একটা প্রমাণিত দুর্নীতি মামলার তদন্তের নামে এভাবে সময় ক্ষেপণ হতে থাকলে কেউ দায়িত্ব নিয়ে অভিযোগ করতে এগিয়ে আসবেন না। দুর্নীতিবাজরা বিচারের মুখোমুখি না হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিও থামবে না। ২০০৫ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে চন্দ্রিমা এলাকার ৮টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে সরকারের কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তিনি ২০১৪ সালে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেন। এরপর ৬ জন কর্মকর্তা বদল শেষে ৬ বছর পর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সর্বশেষ অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপপরিচালক আবদুল করিম মামলার অনুমোদন চেয়ে প্রতিবেদন দেন। অনুমোদন শেষে গত বছরের ২ অক্টোবর দুদক দুর্নীতির মামলাটি দায়ের করে।  অভিযোগের পর দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে অভিনব উপায়ে সরকারি প্লট জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুদকের তথ্যানুসারে, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত দুর্নীতি। যে পত্রিকাটিতে প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার দেখানো হয়েছিল সেটি ছিল একটি নকল কপি। একই দিনে প্রকাশিত পত্রিকাটির যেসব কপি বাজারে ছাড়া হয়েছিল সেইসব পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তিটি ছিল না।

পূর্বপরিকল্পিতভাবে নকল পত্রিকা ছাপিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি গোপন করা হয়, যাতে প্লটগুলোর জন্য একাধিক আবেদনকারী আবেদন জমা করতে না পারেন। যারা আবেদন করেছিলেন এবং বরাদ্দ পেয়েছেন তারাও এই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়। 

সূত্র মতে, ওই সময় প্রতি কাঠা জমি মাত্র ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয় গ্রহীতাদের। যদিও ওই সময় চন্দ্রিমা এলাকার জমির প্রতি কাঠার মূল্য ছিল ২০ লাখ টাকা করে।  অস্বাভাবিক এই কম দরে গোপনে প্লটগুলো বরাদ্দের ফলে কাঠাপ্রতি সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ১৮ লাখ টাকা করে। মোট ৫০ কাঠা জমিতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা। এই প্লট জালিয়াতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক,  হিসাবরক্ষক রোস্তুম আলী, আরডিএর উচ্চমান সহকারী পদ থেকে চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে অন্য দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা মোস্তাক আহমেদ, প্লট গ্রহীতা এনামুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শোয়েব আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. এস এম খোদেজা নাজার বেগম, ডা. রবিউল ইসলাম স্বপন, মাহফুজুল হক ও খায়রুল আলম। এই মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, শিগগিরই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর