শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

এক সড়কের জন্য দুর্ভোগ অনেক

সিলেট বিমানবন্দর বাদাঘাট সড়ক চার লেন করার দাবি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার। সিলেট বিমানবন্দর থেকে বাদাঘাট অবধি ‘বাইপাস’ হিসেবে নির্মিত এই সড়কটির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু মাত্র দুই লেনের সড়ক হওয়ায় এটি কাজে আসছে না তেমনভাবে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি সিলেটের মানুষের। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা রহস্যজনক কারণে পাচ্ছে না গতি। ফলে সিলেট নগরীর মধ্যে পাথরবাহী ট্রাকে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, ট্রাকচাপায় ঝরছে প্রাণ, দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী। একই সঙ্গে পাথরবাহী ট্রাকে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে নগরীর সড়কগুলোও। বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক চার লেন হলে দুর্ভোগ কমে যেত অনেকটাই। সড়কটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল আজ সড়কটি পরিদর্শনে আসছে। জানা গেছে, ২০১২-১৪ অর্থবছরে নির্মিত হয় সিলেট বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক। পরবর্তীতে দুই লেনের এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে সিলেটে। সাধারণ মানুষ, পাথর ব্যবসায়ী, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন মহল থেকে এমন দাবি জোরালো হয়। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অবস্থান। সেখান থেকে ট্রাকে করে পাথর পরিবহন করা হয় সারা দেশে। এ ছাড়া ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার জোন থেকেও আসে পাথরবাহী ট্রাক। বর্তমানে পাথরবাহী ট্রাকগুলো বিমানবন্দর এলাকা দিয়ে ঢুকে সিলেট নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র আম্বরখানা হয়ে শহরে প্রবেশ করে। শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ট্রাকগুলো গিয়ে ওঠে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে। সন্ধ্যার পর থেকে শত শত ট্রাকের চলাচল শুরু হলে সিলেট শহরজুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। স্থবির হয়ে পড়ে শহরের সড়কগুলো। গত এক বছরে শহরের ভিতরে অন্তত ১০ জন পাথরবাহী ট্রাকচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন। গতকালও ট্রাকচাপায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক যদি চার লেনে উন্নীত করা হয়, তবে পাথরবাহী ট্রাক শহরের মধ্যে না ঢুকে ওই বাইপাস দিয়ে বেরিয়ে টুকেরবাজার তেমুখী সেতু পার হয়ে মহাসড়কে গিয়ে ওঠতে পারবে। এতে শহরের মধ্যে যানজটের চাপ কমবে, ট্রাকচাপায় প্রাণ হারানোর ভয়ও থাকবে না। এদিকে, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলমান। কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরটিতে বাড়বে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। ফলে বিমানবন্দরে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে। সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে একমাত্র আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরে ব্যস্ততা বাড়লে সিলেট মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা চার জেলার যাত্রীরা সিলেট শহর দিয়ে প্রবেশ করে আম্বরখানা হয়ে বিমানবন্দরে যাবেন।

 কিন্তু বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক চার লেনে উন্নীত হলে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের যাত্রীরা শহরে প্রবেশ না করেই ওই বাইপাস দিয়ে বিমানবন্দরে যেতে পারবেন।

পর্যটনের তীর্থস্থান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর স্থানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন আকর্ষণ। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের হাইটেক পার্ক, গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, রাতারগুলেও প্রতিনিয়ত আছে পর্যটকদের আনাগোনা। সিলেটের বাইরে থেকে আসা পর্যটকবাহী সব গাড়ি এখন সিলেট শহরের মধ্য দিয়ে গন্তব্যে যায়। এতে পর্যটকদের যানজটে পড়ে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়কটি চার লেন করা হলে পর্যটকরা ওই সড়ক ব্যবহার করে সহজেই সাদাপাথর, হাইটেক পার্ক বা অন্য স্থানে যেতে পারবেন।

জানা গেছে, সিলেট থেকে জোরালো দাবি ওাার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস চার লেনে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১৬ সালে সেই প্রস্তাবনা পাঠানো হয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। পরের বছর আগের প্রস্তাবনা সংশোধন করে চার লেন সড়কের সঙ্গে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে নতুন প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর বছর খানেক আগে ফের চার লেনের প্রস্তাবনা যায় মন্ত্রণালয়ে। দুই লেন থেকে চার লেন নাকি ছয় লেন করা হবে, এ নিয়েই পেরিয়েছে পাঁচ বছর। সম্প্রতি এ বাইপাসের বিষয়ে সড়ক সচিব নিজের মতামতে এটিকে দুই লেনেই রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু সিলেটের মানুষ তার এ মতের সঙ্গে একমত হচ্ছেন না। তারা বলছেন, গুরুত্ব বিবেচনায় বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস চার লেনে উন্নীত করা জরুরি।

এ রকম পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল আজ ওই বাইপাস সড়ক পরিদর্শনে আসছে। সড়ক পরিদর্শন শেষে এটি কয় লেনে উন্নীত করা হবে- নাকি যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে, সে বিষয়ে প্রতিনিধি দল নিজেদের মতামত দেবে। এর ভিতিতেই হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।

সড়কটি প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এটিএম শোয়েব বলেন, ‘সিলেট নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর সড়কে প্রচুর পর্যটকবাহী গাড়ি থাকে। এর সঙ্গে সন্ধ্যার পর যোগ হয় পাথরবাহী ট্রাক। এতে নগরীতে তৈরি হয় যানজট, ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়ক চার লেন করা হলে এ ভোগান্তি থাকবে না। একইসঙ্গে পাথরসহ বিভিন্ন ব্যবসায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নগরীর ভিতর ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দীর্ঘদিন ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়ে আসছি। ট্রাকের কারণে নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হয়, ট্রাকচাপায় মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া পাথরবাহী বড় ট্রাকগুলো চলাচলের কারণে নগরীর রাস্তা নষ্ট হয়ে যায় দ্রুত। এজন্য বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস যতো দ্রুত সম্ভব চার লেনে উন্নীত করা প্রয়োজন।’

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর