রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

চামড়া কিনতে যাচ্ছেন না ট্যানারি মালিকরা

লবণ মাখিয়ে অপেক্ষায় রংপুরের ব্যবসায়ীরা

নজরুল মৃধা, রংপুর

ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রংপুরে চামড়া কিনতে এখন পর্যন্ত ট্যানারি মালিকরা আসেননি। ফলে অর্ধলাখ পিস গরু ও খাসির চামড়ায় লবণ মাখিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে শত শত ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন। 

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পর্যন্ত কোনো ট্যানারি মালিক চামড়া কিনতে আসেননি। জেলা সদরে হাতে গোনা কয়জন ব্যবসায়ী ১৫ থেকে ২০ হাজার পিস চামড়া কিনে লবণ মেখে স্তূপ করে রেখে দিয়েছেন। উপজেলা পর্যায়েও খুব সামান্য চামড়া কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ৫০ হাজার পিসের মতো চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে না এলে চামড়া সংরক্ষণে যে পরিমাণ লবণ ও অন্যান্য ব্যয় হয়েছে সেই দামও উঠবে না। একটি চামড়া সংরক্ষণ করতে ১০ কেজির ওপর লবণ লাগে। প্রতি বস্তা লবণের বর্তমান বাজারমূল্য ৬১০ টাকা। চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে, চাহিদার তুলনায় আমদানি কম এবং ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে রংপুরে চামড়ার ব্যবসায় মারাত্মক ধস নেমেছে। বর্তমানে চামড়ার দাম কম হওয়ায় যারা কোরবানি দিয়েছেন তারাও দামে ঠকেছেন।

দাম কম থাকায় এবার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের তেমন একটা মাঠে দেখা যায়নি। এদিকে চামড়ার সঠিক মূল্য পাওয়ার জন্য সিদ্ধ চামড়া রপ্তানির অনুমতি চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে অনেক কম দামে চামড়া কিনতে বাধ্য হয়েছেন রংপুরের ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যবসায়ীরা বিদেশে সিদ্ধ চামড়া পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় জেলায় ১ লাখ পিসের ওপর চামড়া আমদানি হলেও এবার আমদানি হয়েছে গরু-খাসি মিলে প্রায় ৫০ হাজার পিস। ব্যবসায়ীদের ধারণা, করোনা এবং বন্যার কারণে এমনিতেই এবার মানুষ কম পশু কোরবানি দিয়েছে। এর ওপর চামড়ার দাম একেবারে নিম্নমুখী। গত বছর যে চামড়া বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় এবার সেই চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া গরুর চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৩৫ টাকা। সেই হিসাবে একটি গরুর চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার টাকার ওপর। কিন্তু বাজারে বেঁধে দেওয়া দামের অর্ধেক দামে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দরপতনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করছেন।

চামড়া কম আমদানি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেন, এবার চামড়ার দাম কম হওয়ায় অনেকেই মসজিদ, এতিমখানা অথবা মাদ্রাসায় চামড়া দান করেছেন। ওই সব চামড়া লবণ মেখে রেখে দেওয়া হয়েছে। দাম বৃদ্ধি পেলে ওইসব চামড়া বাজারে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

রংপুর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ খান বলেন, চামড়া ব্যবসার ধস ঠেকাতে হলে সিদ্ধ চামড়া বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে হবে। তা না হলে হাজার হাজার চামড়া ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর