বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

মেয়র প্রার্থী হতে প্রচারণায় স্বঘোষিত চরমপন্থি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পৌরসভার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেছে। ছিলেন চরমপন্থি দলের সদস্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর কিছুদিন কারাগারে থেকে ছাড়া পেয়ে এখন স্বপ্ন দেখছেন পৌরসভার মেয়র হওয়ার। ঈদে তিনি পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেস্টুনও সাঁটিয়েছেন। ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লাহীল কাফী। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌর এলাকায় তার বাড়ি। তিনি পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 এখন বরখাস্ত অবস্থায় আছেন। কাফী একজন চরমপন্থি ক্যাডারও ছিলেন। গত বছর ৯ এপ্রিল পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন দেশের ১৪ জেলা থেকে মোট ৫৯৫ জন সর্বহারা ক্যাডার আত্মসমর্পণ করেন। তাদের মধ্যে এই কাফীও ছিলেন।

কাফী আগে যুবলীগ করতেন। কিন্তু ২০০৮ সালের দিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পৌর মেয়র পদে তিনি নির্বাচন করেন। তখন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। পরের বার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। এরই মধ্যে চরমপন্থি সদস্য হিসেবে তার নাম প্রচার পায়। তাই তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। এখন তিনি আওয়ামী লীগ বা কোনো সহযোগী সংগঠনের পদে নেই। অথচ ঈদ শুভেচ্ছার ফেস্টুনে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ছবি ব্যবহার করেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে কাফীর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি দলের কর্মীও নন। ২০০৮ সালে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাকে দলের সব কর্মকা- থেকে বহিষ্কার করা হয়। কাফী যা করছেন তা ব্যক্তিগতভাবে। এটা দলের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। তিনি যেভাবে সবার ছবি ব্যবহার করেছেন- এ বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কারণ তিনি একজন সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি।

কাঁকনহাট পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন শওকত বলেন, তিনি যখন সভাপতি ছিলেন তখন কাফীকে বহিষ্কার করা হয়। সেই বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। কাঁকনহাট পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘একজন চরমপন্থি ব্যক্তি জাতির পিতা, দলীয় প্রধান, সংসদ সদস্য ও মেয়রের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে ফেস্টুন বানান। এটা আমাদের জন্য লজ্জার।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ বলেন, অজ্ঞাতবশত অনেকেই চাটুকারিতার আশ্রয় নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন তৈরি করছেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। বিশেষ করে স্থানীয় নেতাদের ছবি ব্যবহারের আগে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। কাফীর বিষয়ে পৌরসভা আওয়ামী লীগ অভিযোগ দিলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আবদুল মজিদ বলেন, তিনি বিষয়টি অবগত হয়েছেন। কাফী তার ফেস্টুনে নিজেকে কাউন্সিলর হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন। অথচ তিনি স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত। তাই কাউন্সিলর পরিচয়ও তিনি দিতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে পৌরসভা থেকে জানানো হবে বলে তিনি জানান। মেয়র বলেন, ‘আমার কাছেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগই আসে। তার কর্মকা- পৌরসভার সুনাম ক্ষুণœ করছে এ কথা সত্য। এ নিয়ে আমাদেরও অনেক সময় বিব্রত হতে হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় কাফী পৌরসভার ভিজিএফের গম বিতরণের সময় লুট করে নিয়ে যেতে চান। তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জমি দখলের আরেকটি মামলায় তার দুই বছরের কারাদ- হয়। ‘লাল-সবুজ’ নামে একটি সংস্থা খুলে গ্রাহকের আমানতের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে সংস্থাটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন কাফী। এর আগে ২০১৭ সালে সংস্থাটির কার্যক্রমের এক তদন্ত প্রতিবেদনে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ লিখেছিলেন, আইন লঙ্ঘন করে এটি পরিচালিত হয়। সংস্থাটি থেকে জনগণের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে আবদুল্লাহীল কাফীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠানো হলেও কোনো জবাব দেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর