বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

বাঁহাতিদের জীবনের সাফল্য কৃতিত্বপূর্ণ কাজ ডানহাতিদের তুলনায় ঈর্ষণীয়

আজ আন্তর্জাতিক বাঁহাতি দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ আন্তর্জাতিক বাঁহাতি দিবস। প্রতি বছর ১৩ আগস্ট সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালন করা হয়। বাম হাত ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অধিকার রক্ষা ও সচেতনতার জন্য বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর করোনার কারণে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে ৯-২০ শতাংশ মানুষ বাঁহাতি। ইউরোপের ১৭টি দেশের মানুষের লেখার অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে এক গবেষণায় বলা হয়, ২.৫ থেকে ১২.৮ শতাংশের মতো মানুষ বাঁহাতে লেখেন। আরেক গবেষণার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সাধারণত বাঁহাতির সংখ্যা পুরুদের মধ্যে বেশি। প্রাচীনকাল থেকেই বাঁহাতিরা বিশ্বব্যাপী নানা সামাজিক অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। একসময় সারা পৃথিবীতেই বাঁহাতিদের দুর্ভাগা ও বিদ্বেষপরায়ণ ভাবা হতো। ইউরোপিয়ান ভাষাও এ জন্য অনেকটা দায়ী। যেমন রাইট শব্দের অর্থ ঠিক এবং ডান। শুধু এই যুক্তিতে প্রাচীন ইউরোপে বাঁহাতিদের অবহেলা করা হতো। লাতিন রাজদরবারে ব্যবহৃত শব্দ ‘লেফট’ মানে বাম। বামকে বিবেচনা করা হতো দুর্ভাগ্য আনার প্রতীক হিসেবে। প্রাচীন মিসরে বাঁহাতিরা কখনোই পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না। ভারতীয় উপমহাদেশেও বাঁহাতিদের নিয়ে নানা ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ছিল। আধুনিক সময়ে এসেও বাঁহাতিদের নিয়মিতই পড়তে হয় বিভিন্ন সমস্যায়। নিত্যদিনের ব্যবহারের প্রায় সব সরঞ্জামই তৈরি করা হয় ডান হাতিদের ব্যবহার উপযোগী করে। যাঁরা বাঁহাতি হয়ে জন্ম নেন তাঁদের কাজ করার সময় ডান হাত ব্যবহারে উৎসাহ দেন মা-বাবারা। স্কুল-কলেজে বাঁহাতিদের কটু কথাও শুনতে হয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছ থেকে।  বাঁহাতি হওয়ার কারণ : পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ ডানহাতি। কিন্তু অল্প কিছু মানুষ কেন বাঁহাতি হন? গবেষকরা বাঁহাতি হওয়ার কারণ হিসেবে ৪০টির মতো জিন শনাক্ত করেছেন।

এক গবেষণায় জানা গেছে, জন্মের সময় শতকরা ৭৫ ভাগ শিশুই বামহাতি হওয়ার বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরিবেশ ও জীবনযাপন পদ্ধতি মিলিয়ে শিশু ডানহাতিতে পরিণত হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্তীয় বিভাগের প্রধান ড. টিম ক্রোর মতে, সম্ভবত মানবদেহের পিসিডিএইচ-১১এক্স জিন হাতের ব্যবহারের এ বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়। অক্সফোর্ডের আরেক বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রাংকসের মতে, ক্রোমোজোম ২-এর মধ্যে থাকা এলআরআরটিএম-১ জিনের জন্য মানুষ হাত ব্যবহারে আলাদা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে থাকা ডাই ইথাইল স্টিলবোস্টেরলের সংস্পর্শ বাঁহাতি হতে সহায়ক হয়। কেবল মানুষই নয়, অনেক পশু-পাখিও বাঁহাতি বৈশিষ্ট্য হয়। এক গবেষণায় বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারুরা সব বাঁহাতি। সেখানে বলা হয়, দ্বিপদী প্রাণীর ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু চতুষ্পদী প্রাণীরা এ ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে না। প্রাণীর এই বিশেষ বিষয়টি নিয়ে টিয়া পাখি ও মুরগির ওপর গবেষণা করেছেন নরওয়ের ব্রুনে ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. লেসলি রজারস। তিনি জানান, চোখ ও হাতের সংযোগের কারণে প্রাণীরা শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে। যেমন, যদি কোনো টিয়া পাখি ডান চোখে কোনো খাবার খেয়াল করে। তবে স্বভাবতই সে তা ধরতে ডান পা এগিয়ে দেবে। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য রজারস মস্তিষ্কের ‘হেমিস্ফিয়ার অংশের কার্যপ্রণালির কথা তুলে ধরেন। মস্তিষ্কের এই অংশ ডান ও বামের বিষয়টি নির্ধারণ করে। কাজেই এই অংশটি স্বাভাবিকভাবেই বাঁহাতি বা ডানহাতি হিসেবে মানুষকে তৈরি করে। এ ছাড়া বাঁহাতিদের ডান পাশের মস্তিষ্ক বেশি ব্যবহৃত হয়। এ জন্যই সাধারণত বাঁহাতিরা বেশি উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। ক্রিস এমসি ম্যামস ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডানহাতি ও বাঁহাতিদের ওপর লেখা একটি বইতে উল্লেখ করা আছে, বাঁহাতিদের জীবনের সাফল্য, প্রাপ্তি বা কৃতিত্বপূর্ণ কাজ ডানহাতিদের তুলনায় ঈর্ষণীয়। বলা হয়ে থাকে, তাঁদের আইকিউ বেশি এবং সংগীত ও গণিতে তাঁদের পারদর্শিতা ডানহাতিদের চেয়ে ভালো। ক্রীড়াজগতে ক্রিকেট, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, বেসবল খেলায় বাঁহাতিরা বেশ সুবিধা আদায় করে নিতে পারে। বিশ্বে বেশির ভাগ যন্ত্র এবং সরঞ্জাম ডানহাতিদের উপযোগী করে বানানো। এ জন্য প্রতি বছর বিশ্বে দুই হাজারের বেশি বাঁহাতি বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হন। মা-বাবা দুজন বাঁহাতি হলে সন্তানদের শুধু শতকরা ২৬ জন বাঁহাতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডানহাতিদের তুলনায় বাঁহাতিদের অ্যালার্জি এবং মাথাব্যথার (মাইগ্রেন) সমস্যা বেশি হয়। এ ছাড়া বাঁহাতিরা অনিদ্রা ও তোতলামির সমস্যায়ও ভোগেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর