শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার পর এবার বৃষ্টির বাধা

দোহাজারী-কক্সবাজার ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পে করোনার পর অগ্রগতি নিয়ে এবার বর্ষার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের মেগা প্রকল্পের অন্যতম দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিক নিয়মে চলমান থাকলেও চলমান বৃষ্টি বা বর্ষা মৌসুমের কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে বর্ষার কারণে স্থাপনার ভিতরের কাজগুলো কিছু কিছু করলেও খোলা আকাশের নিচের কাজগুলো বন্ধ থাকায় প্রকল্পের গতি কমে গেছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৪২ শতাংশ কাজ প্রায় শেষও হয়ে গেছে। এতে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খোদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টসহ মন্ত্রণালয়ে। দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম হয়ে দোহাজারী-রামু থেকে কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণসহ নানাবিধ উন্নয়নকাজ বন্ধ ছিল ২৭ মার্চ থেকে। টানা প্রায় দেড় মাস পর শ্রমিকদের উপস্থিতি কম হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কিছু কাজ শুরু হয়, যা এখনো চলমান। তবে শ্রমিকদের দীর্ঘ ছুটি এবং করোনার পাশাপাশি বর্তমান বৃষ্টি বা বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে আবারও প্রকল্পের কাজ থেমে গেছে। দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. মফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ধীরে ধীরে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে বর্তমানে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করা হচ্ছে নিয়মিত। তিনি বলেন, বর্তমান বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে খোলা আকাশের নিচের কাজগুলো করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এখানে স্থাপনার ভিতরের কাজগুলো চলমান রয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্যেও কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামসুজ্জামান বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।  পর্যটকরা কম সময়ে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ছাড়া প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়ে চলছে। এতে করে করোনাকালেও এ প্রকল্পের কাজে যেন কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হয়েছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিমি এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে। সূত্র জানায়, ১২৮ কিমি রেলপথে স্টেশন থাকছে ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম। এতে থাকবে কম্পিউটার-নির্ভর ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁশখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়া এ রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হবে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর