মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পরিবার পরিকল্পনা অফিসের জমি কেনা নিয়ে অনিয়ম!

হঠকারী সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের জন্য প্রয়োজনীয় জমি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম অনুযায়ী আগ্রহী জমির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনটি প্রস্তাবিত জমির একটিকে চূড়ান্ত করে সরকার। কিন্তু পরে রহস্যজনক কারণে চূড়ান্ত করা জমিটি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ না করে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চুপিসারে ভিন্ন জমি মনোনীত করা হয়। চূড়ান্ত করা জমিটি বাদ দিয়ে অপর তিনটি জমির তফসিল সরেজমিন দর্শনের বিকল্প প্রস্তাব দেয় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। দ্বিতীয় এই তালিকায় তিনটি জমির মধ্যে দুটিরই পরিমাণ ৩০ শতাংশের কম। যা জমি নির্ধারণের প্রধান শর্তের লঙ্ঘন। জমি চূড়ান্তকরণের পর ফের বিকল্প জমি নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার-পরিকল্পনা অফিসের স্থানীয় কর্মকর্তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, জমি যাচাই-বাছাই কমিটির কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থের কারণে জমি কেনা নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনুসন্ধান ও প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পরিপত্র জারি করে মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ অধিশাখা।

 দীর্ঘদিন যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর ফরিদপুরে নিজস্ব কার্যালয়ের জন্য তিনটি জমির প্রস্তাবনা চূড়ান্ত হয়। এদের মধ্যে আওলাদ হোসেন বাবর তার ৩৩ দশমিক ২৪ শতাংশ জমি উপযুক্ত বিবেচনা করে অধিগ্রহণের জন্য আবেদন করে সরকারের কাছে। আওলাদ হোসেন বাবর তার ৩০ শতাংশের অতিরিক্ত ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ জমি বিনামূল্যে সরকারকে দিতে সম্মতি জানান। কিন্তু পরবর্তীতে তার এ আবেদনে সাড়া না দিয়ে ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি আগের সিদ্ধান্ত বাতিল না করেই রহস্যজনকভাবে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পক্ষ থেকে আরও তিনটি জমির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। যেখানে আওলাদ হোসেন বাবরের নামই নেই। এতে আওলাদ হোসেন বাবর আপত্তি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করলে চলতি বছরের ১৯ মে আরেকটি সংশোধিত তালিকা করে। যেখানে আওলাদ হোসেন বাবরকে রাখা হয় ৩ নম্বরে। ওই তালিকায় ১ নম্বরে থাকা পপি গং-এর জমির পরিমাণ ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ যা পরিপত্রের পরিপন্থী। জানা গেছে পপি গং-এর  জমিটি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ১ নম্বর ব্যক্তিকে কী কারণে বাদ দিয়ে পপি গংদের জমি নির্ধারণ করা হয়েছে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে যে জমিটি নির্ধারণ করা হয়েছে সেই জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ রয়েছে, আগে নির্বাচিত ব্যক্তির জমি বাদ দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বর্তমানে পপি গংদের জমি বাছাই করে ১ নম্বর তালিকায় রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক সরদার মো. হান্নান বলেন, মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি প্রস্তাবিত তালিকায় ১ নম্বরে থাকা পপি গং-এর জমিটি মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করেছে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল ৮ বছর আগে। পরবর্তীতে জমি পরিদর্শন ও যাচাই- বাছাই করে আওলাদ হোসেন বাবরের জমিটি চূড়ান্ত করা হলেও জমিটি কুমার নদের তীর সংলগ্ন হওয়ায় বাদ পড়ে যায় সেটি। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো লিখিত আদেশ হয়েছে কিনা তা জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ফরিদপুর পরিদর্শনকালে প্রস্তাবিত সব জমিই সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। জমি নির্ধারণের দায়িত্ব এখন মন্ত্রণালয়ের। এখানে জেলা পর্যায়ের আর কিছু করণীয় নেই। জেলা স্থান নির্বাচন কমিটির গত বছরের ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ওই সভায় উত্থাপিত তিনটি স্থানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম মোল্লা সভায় জানান, ‘সভায় বিস্তারিত আলোচনাক্রমে তিনটি স্থানই প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের জন্য কমবেশি উপযুক্ত মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয়’।

তিনটি জমিকেই কমবেশি উপযুক্ত উল্লেখ করা হলেও আওলাদ হোসেন বাবরের মালিকানাধীন ৩৩ দশমিক ২৪ শতাংশ জমি কেন নির্ধারণ করা হলো না এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসলাম মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি অনেক পুরনো, আমি কর্মস্থলে যোগদান করার আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় তিনি এ পদে ফরিদপুরে কর্মরত ছিলেন।

আগে চূড়ান্ত করা আওলাদ হোসেন বাবরের জমি বাদ দিয়ে এবং তাকে কোনো প্রকার চিঠিপত্র ও মৌখিকভাবেও জানানো হয়নি যে, তার জমি বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, ‘কী কারণে আমার জমিটি বাতিল করে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে হয়তো আমার জমিটি বাদ দিয়ে অন্যের জমি চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। সেখান থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নেব’।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর