বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ছিনতাই চাঁদাবাজির অভিযোগ

কনস্টেবল গ্রেফতার এসআই ক্লোজড

মাহবুব মমতাজী

পোস্টিং ওদের থানায়। কিন্তু নিজেদের পরিচয় দিতেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তা। আর ডিবির পরিচয়েই এরা ছিনতাই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করতেন। রাজধানীতে একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ার পর ফাঁস হয় তাদের অপরাধের নানা কাহিনি। পুলিশের কতিপয় সদস্য ও সোর্স নিয়ে গঠিত তাদের এই চক্রটি ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়েও টাকা আদায় করত বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ঘটনাটি রাজধানীর আশুলিয়ার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রের সদস্য আশুলিয়া থানার কনস্টেবল মমিনুর চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটকের পর এখন কারাগারে। এ ছাড়া আটক আছেন তাদের সহযোগী তিনজন সোর্স। তদন্তে চক্রের সদস্য একই থানার এসআই সাজ্জাদুর রহমানের নাম বেরিয়ে এলে তাকে ক্লোজ করা হয়। এ ব্যাপারে আশুলিয়া জামগড়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসির মালিক নূর উদ্দিন একটি মামলা করেন।

নূর উদ্দিন মামলার এজাহারে জানিয়েছেন, ২২ জুলাই আশুলিয়া থানার কনস্টেবল মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে তিন পুলিশ সদস্য রাত ১১টায় জামগড়া এলাকায় তার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসিতে এসে হুমকি দিয়ে যান। তারা এও বলে যান যে, তার দোকানে অবৈধ মালামাল রয়েছে। তাদের ওই অভিযোগের তিনি প্রতিবাদ করেন এবং তার ফার্মেসি তল্লাশি চালিয়ে দেখতে বলেন। কনস্টেবল মমিনুর ও তার দুই সহযোগী ভিতরে ঢুকে তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হলে অল্প কিছু সময় পরই এসআই সাজ্জাদুর সেখানে আসেন। ঘুরেফিরে দেখেন এবং তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এর পরই মমিনুর তাকে ভয় দেখান, আর বলেন, ‘টাকা দিবি, না দিলে ক্রসফায়ার।’ এরপর নূর উদ্দিন ভয় পেয়ে ক্যাশ থেকে ৬৩ হাজার টাকা বের করে দেন। এ টাকা নিয়ে মমিনুর বলেন, ‘দুই দিন পর আসব, আরও ৫০ হাজার টাকা রেডি রাখবি।’ এরপর ২৬ জুলাই তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। ফোনে তাকে বলা হয়, ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় থেকে বলছি। সন্ধ্যার পর যে কোনো সময় তারা তার ফার্মেসিতে আসবে এবং তাকে বাকি টাকা রেডি রাখতে বলে। এ পরিস্থিতিতে নূর উদ্দিন র‌্যাব-৪-এর সিপিসি-২ নবীনগর ক্যাম্পে অভিযোগ করেন। এ অভিযোগে র‌্যাব সদস্যরা তার ফার্মেসির আশপাশে অবস্থান নেন। আর যখন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছয়-সাত জনের একটি দল মাইক্রোবাসে করে তার ফার্মেসিতে টাকা নিতে আসে, তখন তিনি কৌশলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। এরপর র‌্যাব সদস্যরা তাদের নোহা মাইক্রোবাসটি আটক করে। এ সময় পুলিশের একটি জ্যাকেট, একটি ওয়াকিটকি, কিছু ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। আটক করা হয় কনস্টেবল মমিনুর, সোর্স আবদুল হামিদ, ওয়াহেদ ও ওয়াজেদ শেখসহ চারজনকে। পরে তাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন নূর উদ্দিন। এরপর র‌্যাব আরও তিনটি মামলা করে। এসব ঘটনায় এসআই সাজ্জাদুরকে ক্লোজ করে ঢাকা জেলা পুলিশ।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার এ প্রতিবেদককে জানান, মামলাগুলো তদন্ত করছে র‌্যাব। পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছে র‌্যাব। আর তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এখন কথা বলা যাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কি এসআই সাজ্জাদুরকে ক্লোজ করা হয়েছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

র‌্যাব-৪ এর সিপিসি-২-এর কমান্ডিং অফিসার জমির উদ্দিন বলেন, ‘এখনো তদন্তভার আসেনি। তবে তদন্তভার র‌্যাবের কাছে নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যে চক্রটিকে আমরা হাতেনাতে ধরেছি সে সময় এসআই সাজ্জাদুরকে পাইনি। তবে আগের দিন সেখানে গিয়েছিল। এখন পর্যন্ত করা তদন্তে ডিবি পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই দলে নেতৃত্বে থাকার সম্ভাবনায় এসআই সাজ্জাদুরকে দেখা গেছে। যে গাড়িটি জব্দ হয়েছে সেটি তার নামে। ওই গাড়িতে ইয়াবা ও জাল নোট পাওয়া গেছে। পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকিও তার নামে ইস্যু করা ছিল।’

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ভুয়া ডিবি পরিচয় দেওয়া চক্রের সদস্য ছিলেন সাতজন। এ দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন মমিনুর। এরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী, জমির মালিক এবং চাকরিজীবীদের রাতের বেলায় ধরে আনতেন। এতে তাদের কিছু লোক তথ্য দিয়ে সহায়তা করত। পরে টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হতো। ২২ জুলাই চক্রের কয়েকজন আশুলিয়ায় রাস্তার পাশ থেকে মহিদুল ইসলাম সাগর ও আলমগীর নামে দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরা তাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দেয়।

এদিকে এসআই সাজ্জাদুরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না হলেও সিসিটিভি ফুটেজে ডিবি পরিচয় দেওয়া ডাকাত দলের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে। রাতের ফুটেজে দেখা যায়, সেখানে তার কোমরে পিস্তল ও ওয়াকিটকি রাখা। আর এক হাতে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর