বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

থমকে আছে শিক্ষা খাত

আকতারুজ্জামান

থমকে আছে শিক্ষা খাত

জীবনযাত্রায় এখন প্রায় সবকিছুই স্বাভাবিক অবস্থায়। পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে গণপরিবহনও চলছে আগের নিয়মে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও চলছে পুরোদমে। থেমে নেই শিল্পকারখানায় উৎপাদন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে থমকে আছে শিক্ষা খাত। সাড়ে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রথম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েক কোটি ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে অনেকটাই স্থবিরতা বিরাজ করছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর প্রথমেই হোঁচট খেয়েছে এসএসসি ও সমমানের ফলপ্রার্থীরা। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক মাস পরে তাদের ফল প্রকাশ করা হয়। গত কয়েক বছরে ১ জুলাই একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হলেও করোনার কারণে বিলম্বে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ভর্তি কার্যক্রম চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কবে নাগাদ এই ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস শুরু হবে তা নির্ধারণ করতে পারেননি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে। করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষা ইতোমধ্যে পাঁচ মাস পিছিয়ে গেছে। কবে, কীভাবে পরীক্ষা হবে তা নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় ভর্তিচ্ছুদের। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। এইচএসসি পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় এই শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষার পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে। দিনাজপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শামসুন্নাহার কলি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। কবে হবে তাও বুঝতে পারছি না। এখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নেব এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছি।’ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষার আগে কেন্দ্রীয়ভাবে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। করোনার কারণে পাঠদান বন্ধ থাকায় এ বছর এ দুই শ্রেণির কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিক সমাপনী না নিয়ে স্কুলগুলোয় পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজন করতে বলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু জেএসসি-জেডিসির শিক্ষার্থীদের কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে তা এখনো জানায়নি। করোনাকালে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে পাঠদান চালু রেখেছে সরকার। মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠদান হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে টেলিভিশনে পাঠদান চালু থাকলেও শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী এখন এ ক্লাসে মনোযোগী নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোও করোনার প্রকোপে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশোনাই এখন বড় ভরসা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাসের আয়োজন করা হলেও একাদশের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন কোনো আয়োজনই রাখেনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করলেও সিংহভাগই এ ক্লাসের বাইরে থেকে গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলছে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, এ পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ খুলে দিলে কী কী সমস্যা হতে পারে।’ এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘সবকিছুই যেহেতু খুলে দেওয়া হয়েছে সেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বিধিবিধান মেনে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে খুলে দেওয়া উচিত। কবে করোনা একেবারে বন্ধ হবে সেজন্য এত দিন অপেক্ষা করা উচিত হবে না। সে ক্ষেত্রে এক ক্লাসে দুই শিফট করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া যেতে পারে।’

দেশের সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চলমান থাকলেও বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পাঠদান চলছে না। সে হিসেবে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত কোটি কোটি শিক্ষার্থীও অনলাইন ক্লাসের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ক্লাসের উদ্বোধন করেছে বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও দিনের বেলা (ক্লাসে) এ দূরত্ব হয়তো নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু আবাসিক হলগুলোয় দূরত্ব নিশ্চিত করা অনেকটাই অসম্ভব। এ ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য গণরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলোয় তো কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব নয়।’ তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সময় বুঝে ব্যবস্থা নেবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর