মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্রিকেটার পরিচয়ে প্রতারণা দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ

পুলিশের কাছ থেকে নিয়েছেন ৩২ লাখ

মাহবুব মমতাজী

জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ফোন করলেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তাকে। বললেন ‘ভাই! আশরাফুল আমার ছোট ভাই। আমার জরুরি কিছু ডলার দরকার। তাই ওকে ফোন করে আনতে বলেছি। কিন্তু ওর কাছে নাকি টাকা নেই। আপনি কিছু টাকা ধার দিন, ডলার নিয়ে বাসায় এলে ও টাকা নিয়ে গিয়ে আপনাকে ফেরত দেবে।’ নানা ধরনের তদবিরে এভাবেই জুনিয়র আশরাফুলের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলতেন মেহরাব হোসেন অপি, মোহাম্মদ আশরাফুল, তুষার ইমরান ও মুশফিকুর রহিম। বেশ কিছুদিন পর পুলিশ কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে জানতে পারলেন ক্রিকেটারদের কেউই তাদের সঙ্গে কথা বলতেন না। তাদের নাম ব্যবহার করে কথা বলতেন জনি নামে এক যুবক। বন্ধু জনির ফোন নম্বর ও নিজের ফোনে বিভিন্ন ক্রিকেটার আর পুলিশ কর্মকর্তার নাম সংরক্ষণ করতেন আশরাফুল ওমর উজ্জ্বল (৩২)। প্রতারণার মাধ্যমে শুধু পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই নিয়েছেন ৩২ লাখ টাকা। আর সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারের অনেকে তার কাছ থেকে হাতিয়েছেন প্রায় ২ কোটি টাকা।

তিনি জনির নম্বরে পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও ছবি সংরক্ষণ করতেন। নম্বর এক হলেও প্রয়োজনভেদে তার মোবাইলের কন্ট্রাক্ট লিস্টে নাম ও ছবি পরিবর্তন করতেন। এরপর জনির নম্বরে ওয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলতেন। একসময় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) প্র্যাকটিসের সময় ক্রিকেটারদের বল কুড়িয়ে দিতেন এই প্রতারক আশরাফুল ওমর। সে সুবাদে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ হয় তার। ক্রিকেটারদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়ে পুলিশের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেন। এরপর পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ছবি তুলে তার ফেসবুকে প্রকাশ করতেন। এসব ছবি দেখিয়ে সাধারণদের বলতেন জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কথা। পুলিশের অনেকে সন্তানকে বিকেএসপিতে ভর্তি করানোর জন্য তাকে দিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। শেয়ারে ব্যবসার কথা বলেও টাকা নিয়ে আর ফেরত দিতেন না।

রাজধানীর বারিধারার একটি প্রাইভেট কারের শোরুমে গিয়ে গাড়ি কিনবেন বলে গাড়ি নিয়ে সটকেও পড়েন আশরাফুল। এ অভিযোগে গত ৩১ আগস্ট রাজধানীর ডেমরা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়তে থাকে পুলিশের কাছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রাকিবুল হাসান বলেন, আসলে তার সঙ্গে কোনো ক্রিকেটারের কোনো সম্পর্কই নেই। আশরাফুল বিভিন্ন ক্রিকেটারের সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়ে সাধারণ মানুষ এমনকি অনেক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গেও প্রতারণা করে আসছিলেন। তার অন্যতম সহযোগী জনি নামে একজনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, আশরাফুল অ্যাপসের মাধ্যমে অন্যের কণ্ঠ হুবহু নকল করতেন। সে হুটহাট ফোন ধরিয়ে দিতেন টার্গেট ব্যক্তিকে। অন্য প্রান্ত থেকে কখনো জনপ্রিয় ক্রিকেটার আবার কখনো পুলিশের বড় কর্মকর্তার কণ্ঠ শোনা যেত। ফলে তাকে সহজেই বিশ্বাস করত মানুষ। আশরাফুলের বাড়ি ডেমরার কোনাপাড়া মোমেনবাগে। তার বাবা হাফিজ আহম্মেদ। গত বছরের ২৭ আগস্ট রাজধানীর কদমতলীতে লিয়াকত ফরাজী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে দেড় লাখ টাকা বাগিয়ে নিয়ে আর ফেরত দেননি। এ ছাড়া সম্প্রতি কদমতলী থানার এক এএসআইর ছেলেকে বিকেএসপিতে ভর্তি করানোর কথা বলে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল জানিয়েছেন, প্রতারণার মাধ্যমে শুধু পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই ৩২ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। আর সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারের অনেকে তার কাছে প্রায় ২ কোটি টাকা পাওনা। এ টাকার বেশির ভাগই তিনি মতিঝিলের দিলকুশা ক্লাবে ক্যাসিনো খেলে শেষ করেছেন।

ফাৎহুন কবির ভূঁঞা নামে এক ভুক্তভোগী জানান, বারিধারা প্রগতি সরণির জাপান মোটরস লিমিটেডে আশরাফুল নিজেকে ক্রিকেটার মেহরাব হোসেন অপির ছোট ভাই পরিচয় দেন। পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার আত্মীয় এমন কথাও বলেন। এরপর গত ২৬ জুন টয়োটা এক্সিও২০১৪ মডেলের একটি প্রাইভেট কার কেনার কথা বলে নিয়ে ভেগে যান।

সর্বশেষ খবর