ফের বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। সকালে পানি কিছুটা কমলেও দুপুরের পর থেকে ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ব্যারাজ পয়েন্টে একাধিকবার পানি ওঠানামার কারণে তিস্তা অববাহিকার সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উজানে বৃষ্টির কারণে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় গত দুই দিন থেকে পানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ওঠানামা করছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশ প্রান্তে অতিবৃষ্টির কারণে গত মঙ্গলবার রাত ৯টার পর তিস্তার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর বৃষ্টিপাত কিছুটা কমায় গতকাল সকাল ৯টা নাগাদ পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচে নামে। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে গতকাল সকালে বলা হয়, তিস্তার পানিসমতল আগামী ১২ ঘণ্টায় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে স্বল্প সময়ের জন্য বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। একই সঙ্গে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানিসমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। কমছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি। ২৪ ঘণ্টায় পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানিসমতল স্টেশনের ৩৮টিতে পানি বেড়েছে। এবারের ৪৬ দিনের বন্যায় ৩৩ জেলার ৫০ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা ও নদী ভাঙনে লাখ লাখ মানুষ হারিয়েছে ঘরবাড়ি, ভিটে-মাটি, জমির ফসল, চাষের মাছ। বন্যার পানি নামলেও এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি দুর্গতরা।
খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে অর্ধাহারে, অনাহারে কাটছে দিন। টাকার অভাবে মেরামত করতে পারছে না থাকার ঘরটি। এর মধ্যে ফের বন্যার আশঙ্কায় ভাঁজ পড়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষের কপালে।
আমাদের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, দুই মাস আগে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরে ফিরেছিল চরের মানুষজন। প্রমত্তা তিস্তা শুকিয়ে হয়েছিল খাঁখাঁ। গত দুই দিন দেশের অভ্যন্তরে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তা অববাহিকায় আবারও বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেলেও এখন বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ওঠানামার কারণে তিস্তা অববাহিকার সবাইকে সর্তক রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। যে কোনো সময় ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা ও ধরলার ৬৩ চরে আবারও বন্যার আতঙ্কে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।গত ৫ জুলাই সর্বশেষ তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। ৮ সেপ্টেম্বর দুুপুর ১২টা থেকে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তায় পানি প্রবাহ বেড়েছে। রাতে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করে পানি। গতকাল সকালে পানি কিছুটা কমলেও বিকালে আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
তিস্তাবিধৌত সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘দুই মাস ভালোই ছিলাম। পানি নেমে যাওয়ায় চরের মানুষগুলো স্বস্তিতে ছিল। ফের পানি বাড়তে শুরু করায় তিস্তাপাড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল সকালে পানি কিছুটা কমলেও বিকাল থেকে হু হু করে বাড়ছে। আতঙ্কে মানুষ নির্ঘুম রাত পার করছে। পানি বাড়লেই চরের ১২-১৪ হাজার মানুষ নিয়ে আবারও বেকায়দায় পড়তে হবে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে ওঠানামা করছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী যে কোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ভারত গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় দ্রুত বাড়ছে নদীর পানি। তিস্তা অববাহিকার চরবেষ্টিত এলাকার চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।