শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পানি বেড়ে প্লাবিত তিস্তার চরাঞ্চল

নদীগর্ভে শতাধিক ঘরবাড়ি, ভাঙনের মুখে ঈদগাহ-ব্রিজ-স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

পানি বেড়ে প্লাবিত তিস্তার চরাঞ্চল

তিস্তায় পানি বাড়ায় লালমনিরহাটে ভাঙনের মুখে পড়েছে ঈদগাহ মাঠ। ছবিটি রুদ্রেশর এলাকা থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যা আর ভাঙনের খড়গ নামছেই না তিস্তাপাড়ের জনগণের ওপর থেকে। একদিন পানি কমে ফের বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে তিস্তার পানি। শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত দুই দিনে লালমনিরহাটের আদিতমারী, হাতিবান্ধা ও সদরের ছয়টি ইউনিয়ন এবং রংপুরের গঙ্গাচড়ায় লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলী এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুর মহিপুর-কাকিনা সংযোগ সড়কে আবারও দেখা দিয়েছে ভাঙন। হুমকির মুখে পড়েছে দুটি ঈদগাহসহ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন চরের ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ফের তলিয়ে গেছে আমনসহ শাকসবজির খেত। এদিকে শুধু তিস্তা নয়, দেশের প্রায় অর্ধশত নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ঢাকার চারপাশের তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার পানিও। পানি বাড়ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, দেশের অভ্যন্তরে ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের সব নদ-নদী বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ৫৩টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল সকালে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকাল নাগাদ তা ১০ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি চলে যায়। লালমনিরহাট ও রংপুর থেকে আমাদের সংবাদকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল বিকালে নাগাদ পানি আবারও বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি হ্রাস-বৃদ্ধিতে তিস্তায় প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে লালমনিরহাট ও রংপুরের সীমানায় তিস্তাপাড়ের শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসকেএস বাজারের কাছে পূর্ব ইচলী ঈদগাহ মাঠ, জয়রামওঝা ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চর ইচলী এলাকার মোনাজাত উদ্দিন আনন্দলোক বিদ্যালয়টিও হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে বালুর বস্তা ও গাছপালার ডাল ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে, তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এসকেএস বাজারের সামনে এলজিইডির ব্রিজটির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজটি। এলজিইডি জিও ব্যাগ ফেলে ব্রিজটি রক্ষার চেষ্টা চালালেও তীব্র স্রোতের কারণে তা কাজে আসছে না। স্থানীয় লোকজন ভাঙনের ভয়ে তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও ভাটির দিকে তলিয়ে গেছে অনেক চর। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চরে আবারও বন্যা আতঙ্কে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নদীতে পানি বাড়ায় চর রাজপুর, চর গোকুন্ডা, চর কালমাটি, চর জয়রাম ওঝা, ইশোরকোল, পূর্ব ইচলী, পশ্চিম ইচলী, রুদ্রেশ্বর, চর ভোটমারী, চর ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুর্ণা, গড্ডিমারী, সানিয়াজান এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান গতকাল বিকালে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বেড়ে      এখন বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ওঠা-নামার কারণে তিস্তা অববাহিকা এলাকার সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে।’ লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, গতকাল সকালে তিস্তার ভাঙনে তার ইউনিয়নের ছয়টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। রংপুরের লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, পূর্ব ইচলী ঈদগাহ মাঠ ও মোনাজাত উদ্দিন আনন্দলোক বিদ্যালয়টি হয়তো আর রক্ষা করা যাবে না। মহিপুর-কাকিনা সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ভারত গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বাড়ছে। যে কোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ জন্য তিস্তা অববাহিকার চরবেষ্টিত এলাকার চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর