সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

উত্তরে ফের বন্যা আতঙ্ক

চলছে বৃষ্টিপাত বাড়ছে পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে ফের বাড়ছে দেশের উত্তর প্রান্তের প্রধান নদ-নদীর পানি। এতে উত্তরের জনপদে আবারও বন্যাতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধের পর চতুর্থ দফা বন্যার আশঙ্কায় অনেকে আবারও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। একইসঙ্গে তিস্তা, ধরলা, যমুনা ও পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল সকালের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৩৯টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ৫৮টি স্টেশনে। অপরিবর্তিত ছিল চারটি স্টেশনের পানি সমতল। দুই দিন হ্রাস পাওয়ার পর ফের বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি। তবে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার যথাক্রমে ৩৫ ও ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আজও তা অব্যাহত থাকতে পারে। হ্রাস পাচ্ছে গঙ্গা-পদ্মার পানি সমতল। বেশ কয়েকটি প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত  ফের বন্যার কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এমনকি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো নদ-নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না বলেই সংস্থাটির পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এদিকে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চরের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক শাখা নদীর পানিও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল। একইসঙ্গে নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অধিকাংশ বছর সেপ্টেম্বরে একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখে আসছে দেশের মানুষ। এ কারণে এবারও সেপ্টেম্বরে বন্যার আশঙ্কায় অনেক কৃষক শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করতে দ্বিধায় ভুগছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক তিন দফা বন্যায় এখনো বিধ্বস্ত বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো।

 ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেননি নিম্ন আয়ের মানুষ। রাস্তাঘাট ভেঙে চৌচির। সড়কে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। ব্রিজ-কালভার্টের সংযোগ সড়ক পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি নামলেও শুরু হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ। দীর্ঘদিনের বন্যায় অনেক পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে। জুটছে না তিন বেলা খাবারও। এতে নদীতে পানি বাড়তে দেখলেই আতঙ্ক জেঁকে বসছে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে।

আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চতুর্থ দফা বন্যার আতংকে আছে ধরলা ও তিস্তা পাড়ের জনগণ। এদিকে ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় ধরলা পাড়ের মানুষজন আশপাশের উঁচু স্থানে আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকেই ঘরের মালামাল গুছিয়ে খাটের ওপর তুলে রাখছেন। ধরলা পাড়ের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, আবার পানি বাড়ছে। এবার বন্যা হলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, নদ-নদীর পানি বাড়লেও এখনো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত না থাকলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো শঙ্কা নেই। দু-এক দিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনার পানি দুই দিন কমছে, ফের দুই দিন বাড়ছে। পানির এই হ্রাস-বৃদ্ধিতে যমুনার অরক্ষিত তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বন্যার আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে। বন্যায় ফসল হারানো কৃষক আবার নতুন ফসল লাগানোর প্রস্তুতি নিলেও আতঙ্কে আছে। চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া ইউপির মোকারভাঙ্গা, রেহাইপুকুরিয়া, দেওয়ানগঞ্জ বাজার, বাঘুটিয়া ইউপির চর সলিমাবাদ, চর বিনানুর, মেটুয়ানী এবং শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও কৈজুরীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি।

রংপুর ও লালমনিরহাট থেকে আমাদের সংবাদকর্মীরা জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চরে আবারও বন্যাতঙ্কে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। ইতিমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন চরের ২০ হাজারের বেশি মানুষ। তলিয়ে গেছে আমনসহ শাকসবজির খেত। তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, ফসলি জমি, ঈদগাহ, কবরস্থান, স্কুল, ব্রিজ ও রাস্তা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর