বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হু হু করে বাড়ছে ধরলার পানি

ফের প্লাবিত উত্তরের দুই জেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

হু হু করে বাড়ছে ধরলার পানি

দেড় মাসের টানা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের পানিতে তলিয়ে গেছে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল। হু হু করে বাড়ছে ধরলা ও তিস্তার পানি। এক দিনের ব্যবধানে ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিকালে লালমনিরহাটের কুলাঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ধরলা। কুড়িগ্রামে গতকাল নদীটির পানি সমতল ছিল বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপরে। অন্যদিকে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে তিস্তার পানিও। পানি বৃদ্ধিতে আবারও তলিয়ে গেছে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। শুরু হয়েছে প্রবল ভাঙন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে কুড়িগ্রামের অন্তত ১০টি গ্রাম। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের   গতকাল সকালের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম স্টেশনে ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৮ সেন্টিমিটার। সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ধরলা। বিকাল নাগাদ পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৫৭টিতে পানি বেড়েছে। গঙ্গার পানি সমতল হ্রাস পেলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি। সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার অন্যান্য প্রধান নদীর পানি সমতলও বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত।

সংস্থাটির তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জায়গায় ও বাংলাদেশ প্রান্তের অনেক স্থানে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের লরেরগড়ে ২১৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ২০০ মিলিমিটার, গাইবান্ধায় ১৮০ মিলিমিটার, ছাতকে ১২৫ মিলিমিটার, জাফলংয়ে ১০৭ মিলিমিটার ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ২৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর ২৪ ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হলেই নগরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

আমাদের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার বিকালে জেলার কুলাঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তার পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এতে লালমনিরহাটের নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নদী অববাহিকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা ও সদরের আটটি ইউনিয়নের ২৯টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা ৬৩ চরের মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ও শীতকালীন আগাম সবজির খেত। লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্র জানায়, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের প্রায় ৭০০ একর জমির রোপা আমন খেত ও আড়াই একর জমির বিভিন্ন সবজি তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিকালে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টায় পানি আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার সবাইকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।

আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি প্রতিনিধি জানান, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ধরলা নদীর পানি গত দুই দিনে অনেক বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল বিকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলার পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তার পানি বাড়লেও এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। চতুর্থ দফা বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ধরলা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এদিকে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ পুনরায় ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উলিপুর উপজেলার থেতরাই, চর বজরা ও গাইবান্ধা জেলা লাগোয়া কাশিমবাজার এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ধরলা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে সদর উপজেলার মোগলবাসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন যাবত ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানকার উজানের পানি দ্রুত নেমে আসায় কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরলার পানি আরও দুয়েক দিন বাড়বে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, ধরলা নদীর পানি বেড়ে নদী তীরবর্তী ১০৫ হেক্টর জমির সদ্য রোপণকৃত আমন ফসল তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, বন্যার খবর ইতিমধ্যেই ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যারের নলেজে রয়েছে। বন্যা ও ভাঙন কবলিতদের চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর