এক দিনের ব্যবধানে সুনামগঞ্জে যদুকাটা নদীর পানি কমলেও বগুড়ায় আবারও বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে যমুনার পানি। সেই সঙ্গে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনা ও ধরলাপাড়ের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। দেড় মাসের বন্যার ক্ষত না শুকাতেই ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। ডুবে গেছে আমন ও সবজি খেত। সেই সঙ্গে তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তা, ব্রিজ, আবাদি জমি। ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আত্রাই, করতোয়া ও পদ্মা নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়তে শুরু করেছে দেশের অধিকাংশ প্রধান নদ-নদীর পানি। গতকাল সকালে কুড়িগ্রামে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৩৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে গতকাল যদুকাটা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল সকালে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার সুরমা, কুশিয়ারা, সোমেশ্বরী এবং কংস নদীর পানি সমতলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনার পানি কাজিপুর পয়েন্টেও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে আজ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৬৩টিতে পানি বেড়েছে। বগুড়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, যমুনার পানি বাড়ায় বগুড়ায় চতুর্থ দফা বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি গতকাল বিকালে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দ্রুত বাড়ছে বাঙালি ও করতোয়া নদীর পানিও। গত জুলাই মাসের শেষে ও পুরো আগস্ট মাসজুড়ে তিন দফা বন্যায় ভেঙে চৌচির বগুড়ার রাস্তাঘাট। নষ্ট হয়ে গেছে জমির ফসল। স্থানীয়রা বলছেন, যমুনার পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে যে কোনো মুহূর্তে তা লোকালয়ে ঢুকে যেতে পারে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি পৌরসভার দক্ষিণ হিন্দুকান্দি, ছাগলধরা, ডোমকান্দি, হাটশেরপুর ইউপির হাসনাপাড়া, শাহানবান্দা এবং চর এলাকার ৫টি ইউনিয়নের নিচু এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে যমুনা, বাঙালি ও করতোয়া নদীর পানি কমতে শুরু করবে। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টার টানা বর্ষণে তিস্তা ও ধরলার পাশাপাশি জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলসহ চরগুলো। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক। গতকাল বিকালে ধরলা নদীর পানি লালমনিরহাটে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও ভাটির দিকে তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চর। জেলার চর রাজপুর, চর গোকুন্ডা, চর কালমাটি, চর ফলিমারী, ইশোরকোল, পূর্ব ইচলী, রুদ্রেশ্বর, চর ভোটমারী, চর ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুর্না, গড্ডিমারী, সানিয়াজান, কুলাঘাট, খুনিয়াগাছ, মোগলহাট এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। নদী তীরবর্তী কৃষক লিটন মিয়া বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শীতকালীন শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেছিলাম। এক রাতে সব ডুবে গেছে।