শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাতের আঁধারে শতবর্ষী পুকুর ভরাট

এলাকাবাসীর বিক্ষোভ-মানববন্ধন প্রতিরোধের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশাল নগরীর ভাটিখানা এলাকায় রাতের আঁধারে ৯৫ বছরের পুরনো পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয়রা। পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও স্থানীয় হাজারো পরিবারের ব্যবহারযোগ্য পানির উন্মুক্ত উৎস। বৃহস্পতিবার রাতে শতাধিক ট্রাক বালু ফেলে পুকুরটি ভরাট শুরু করে। পুকুরটি রক্ষায় গতকাল বিকালে ওই এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন কয়েক শ নারী-পুরুষ। তারা পুকুর ভরাট প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। নগরীর ভাটিখানা-আমানতগঞ্জ সংযোগ সড়কের পাশে বিশাল আয়তনের পুকুরটি ওই এলাকার ঐতিহ্য। পুকুরের পূর্ব পাড়ে শেরেবাংলার ফুফুর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘আলতাফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।  স্থানীয় কাজীবাড়ি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সেলিম মৃধা জানান, ১৯২৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ওই পুকুর খনন করে মাটি দিয়ে বিদ্যালয়ের ভিটি উঁচু করা হয়। শেরেবাংলার ফুফু আলতাফুন্নেছার বিশাল ভূসম্পত্তি ছিল ওই এলাকায়। তারাই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। কালক্রমে ক্রয় সূত্রে পুকুরটির মালিক হন নগরীর আলেকান্দার ফয়েজ আহমেদ। তার উত্তরাধিকাররা এখন পুকুরটির মালিক। সেলিম মৃধা জানান, গত ১০ বছর আগে পুকুরটি কেনার জন্য মসজিদ কমিটির সঙ্গে ফয়েজ আহমেদের চুক্তি হয়েছিল। তিনি আকস্মিক মৃত্যুবরণ করায় পুকুরটি বিক্রি হয়নি। তার পক্ষে আজহার মুন্সি (কয়েক মাস আগে মৃত্যুবরণ করেন) নামে এক ব্যক্তি কয়েক যুগ ধরে মরহুম ফয়েজ আহম্মেদের সম্পত্তি দেখাশোনা করছিলেন। পুকুরটির লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন আজাহার মুন্সির স্ত্রী বিলকিস বেগম। বুধবার পুকুর সেচ শুরু করে বৃহস্পতিবার দিনে মাছ ধরে নেয় বিলকিস বেগমের ছেলে মিন্টু মুন্সি। তারা ধরে নিয়েছিলেন মাছ ধরার জন্য পুকুর সেচ করেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত অনুমানিক দেড়টার দিকে একের পর ট্রাক এসে পুকুরে বালু ফেলতে থাকে। বহিরাগত যুবকরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বালু ফেলার কাজ তদারকি করেন। পরদিন সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা বিকালে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ করেন।  স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাদশা এলাকাবাসীর আন্দোলনে অংশ নিয়ে বলেন, সিটি করপোরেশন নগরীর দেড় শ পুকুর সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে কাজীবাড়ি মসজিদ-সংলগ্ন পুকুরটিও রয়েছে। রাতের আঁধারে অসৎ উদ্দেশ্যে বালু ফেলে পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই জমির বর্তমান কেয়ারটেকার মিন্টু মুন্সি বলেন, মৃত ফয়েজ আহম্মেদের উত্তারাধিকাররা (মেয়ে এবং ছেলে মৃত তারেক আহমেদের স্ত্রী) রাতে উপস্থিত থেকে পুকুর ভরাট শুরু করেন। সেখানে বহুতল ভবন করবেন তারা।  বরিশাল নদী-খাল-জলাশায় রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানা পুকুরও ভরাট করা যাবে না। ওই এলাকায় আগুন লাগলে নির্বাপণে পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস এই পুকুরটি। পুকুর রক্ষায় আইনি লড়াইয়ের কথা বলেন তিনি। পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক মো. আবদুল হালিম বলেন, ভাটিখানা এলাকায় পুকুর ভরাটের খবর তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি। জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

পুকুর ভরাট বন্ধে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর