রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কমিটি নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগে অসন্তোষ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

কমিটি নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগে অসন্তোষ

কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা পড়তেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে। অভিযোগ ওঠেছে প্রস্তাবিত কমিটিতে সাবেক কমিটির অনেক নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের অবমূল্যায়নেরও অভিযোগ তুলেছেন দলের একাংশের নেতারা। এ অবস্থায় কেন্দ্রে ‘বিকল্প কমিটি’ জমা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। আর জেলা কমিটিতে ত্যাগীদের স্থান দিতে গতকাল নগরীতে মিছিল হয়েছে।

তবে মহানগরের নেতাদের দাবি তারা পদবণ্টনে সাবেক পদবি নয় পদপ্রত্যাশীদের ‘কর্ম’ বিবেচনা করেছেন। স্বচ্ছ ইমেজধারীদের দিয়েই কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। আর জেলার নেতারা বলছেন ‘সাবেক কমিটির’ কাউকেই বাদ দেওয়া হয়নি। নানা কারণে কার্যনির্বাহী কমিটিতে যাদের জায়গা হয়নি তাদেরকে উপদেষ্টা কমিটি বা জাতীয় পরিষদে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া হয়। কমিটি জমা দেওয়ার পরই দলের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। মহানগরের প্রস্তাবিত কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে বাদ পড়েন সাবেক কমিটির অন্তত এক ডজন নেতা। সাবেক কমিটির সকল কার্যক্রমে সবসময় সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাদেরও বাদ দেওয়া হয় প্রস্তাবিত কমিটি থেকে। মহানগরের প্রস্তাবিত কমিটিতে ঠাঁই হয়নি ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করে আসা অনেক নেতার। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করে আসা সাবেক কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সিটি করপোরেশনের চারবারের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। প্রস্তাবিত কমিটিতে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। আর কমিটিতে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে ওয়ান-ইলেভেনের সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বপালনকারী কাউন্সিলর আজম খানকে। আরেক যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন যুবলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করা আবদুর রহমান জামিলকে। একইভাবে বারবার কারানির্যাতিত জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাসকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া নিয়েও নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের শেষ নেই। কমিটির সহসভাপতির ক্রমবিন্যাস নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। এসব অসন্তোষ থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রস্তাবিত কমিটির তৃতীয় সহসভাপতি ফয়জুল আনোয়ারের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা মিলে কেন্দ্রের কাছে বিকল্প একটি কমিটি জমা দিয়েছেন।

 

কমিটি থেকে বাদপড়া প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘আগের কমিটিতে কে কী ছিলেন সেটা বড় নয়, পদ পেয়ে কে কী করেছেন আমরা সেটা মূল্যায়ন করেছি। যারা দল ও মানুষের জন্য ভালো কাজ করেছেন তাদেরকে প্রস্তাবিত কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। যারা রাজনীতিতে স্বচ্ছ ছিলেন না কেন্দ্র ও বিভিন্ন পর্যায়ের নির্দেশনায় তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তুলনামূলক অসন্তোষ কম। তবে পদপ্রত্যাশী ত্যাগীদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার দাবিতে গতকাল নগরীতে মিছিল হয়েছে। ‘বঞ্চিত আওয়ামী লীগ’-এর ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে দেখা না গেলেও ছিলেন অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন। মিছিল থেকে মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা শাহরীয়ার কবীর সেলিমসহ বাদপড়া ত্যাগীদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

এ ব্যাপারে শাহরীয়ার কবীর সেলিম বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেও আওয়ামী লীগে ঠাঁই হয়নি। আওয়ামী লীগের গত দুই কমিটিতে আমাকে রাখা হয়নি। বাধ্য হয়ে এখন শ্রমিক লীগের রাজনীতি করতে হচ্ছে। এবারও ষড়যন্ত্র করে আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার মতো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের জায়গা না হলেও কমিটিতে সুবিধাবাদীরা ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন।’

তবে কমিটিতে অসন্তোষ নেই দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘সাবেক কমিটির কোনো নেতাকেই প্রস্তাবিত কমিটিতে বাদ দেওয়া হয়নি। কার্যনির্বাহী ও উপদেষ্টা কমিটিতে তাদেরকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এমনকি যারা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ ও বিদেশে অবস্থান করছেন তাদেরকেও সম্মান দিয়ে উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রম বিবেচনায় গত কমিটির কিছু নেতাকে পদোন্নতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।’

শাহরীয়ার কবীর সেলিমের অভিযোগ প্রসঙ্গে নাসির খান বলেন, ‘তিনি মহানগরের রাজনীতি করেন। বর্তমানে তিনি মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে চাইলে মহানগরে করতে পারেন, জেলার কমিটিতে তাকে রাখার দাবি অযৌক্তিক।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর