রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আস্থা বাড়ছে ট্রিপল নাইনে

পৌনে তিন বছরে ২ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার কল

আলী আজম

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে এক তরুণ ট্রিপল নাইনে ফোন করে জানান, রাজধানীর মুগদার বড় মসজিদের পাশে তাদের বাসা। পারিবারিক কলহের জেরে তার বোন আত্মহত্যা করতে গিয়ে ঘুমের ওষুধ ও বিষপানে অচেতন হয়ে পড়েছে। তিনি বর্তমানে ঢাকার বাইরে আছেন। তার বোন অচেতন হওয়ার আগে ফোনে কথা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর ফোন রিসিভ করছেন না। তাকে উদ্ধারের অনুরোধ করেন ওই তরুণ। ট্রিপল নাইন কর্তৃপক্ষ মুগদা থানা পুলিশের সহায়তায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ওই তরুণীকে রক্ষা করায় ওই তরুণ ট্রিপল নাইন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সহায়তার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন (৯৯৯)। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আস্থা বাড়ছে এ সেবার ওপর। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। মহামারী করোনার সময় এ সেবাটি বিদ্যুৎ গতিতে কাজ করেছে। করোনা আক্রান্তকে উদ্ধার, লাশ উদ্ধার, লকডাউন মানতে বাধ্য করাসহ করোনাসংক্রান্ত সেবা দিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ সেবাটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পৌনে তিন বছরে ২ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ৭টি কল এসেছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৭টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। কর্তৃপক্ষ বলছেন, মোট কলের ২২ শতাংশের বিপরীতে কোনো না কোনোভাবে সেবা দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, করোনার তথ্যসহায়তা চেয়ে বেশির ভাগ কল এসেছে। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩টি করোনাসংক্রান্ত বিভিন্ন সেবার জন্য কল এসেছে।

 করোনার তথ্য জানতে চেয়ে ফোন এসেছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৪টি। করোনাসংক্রান্ত সেবা দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৬৪৯ জনকে। এ ছাড়া করোনার সময় ত্রাণসহায়তা চেয়ে, করোনা আক্রান্তের তথ্য বা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির তথ্য দিয়ে, লকডাউন মানা-না মানা, ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতির খবর জানিয়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ চলাচলের খবর দিয়ে ফোন করছে সাধারণ মানুষ।

ট্রিপল নাইনসূত্রে জানা গেছে, ট্রিপল নাইনে অপ্রয়োজনেও অনেকে ফোন করছে। দিচ্ছে মিথ্যা তথ্যও। গত আড়াই বছরে ৯৯৯-এ ৭৮ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর বিষয়ে প্রচারের অভাব রয়েছে। এ কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। তবে তথ্যদাতা যে-ই হোক তাকে বেশি বিরক্ত করা যাবে না। তার কাছ থেকে একবারই তথ্য নিতে হবে। নইলে পরে তিনি তথ্য দিতে বিমুখ হবেন। অন্যরাও আগ্রহ হারাবে।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, ট্রিপল নাইনে মানুষের আস্থা বাড়ছে। তাই চাহিদাও বাড়ছে। বাড়ছে সেবার মানও। ৯৯৯-এ কল করার সঙ্গে সঙ্গে মিলছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা। থানায় থানায় এমডিটি (মোবাইল ডাটা টার্মিনাল) ও টিডিএস (থানা ডেসপাস সিস্টেম) চালু করার ফলে সেবা আরও সহজ হয়েছে। ট্রিপল নাইন সেবাটি গ্রহণ করে জনগণ খুশি। শতাধিক জনবল নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে জনবল রয়েছে ৪ শতাধিক। বর্তমানে ট্রিপল নাইনে একসঙ্গে ১০০টি কল রেসপন্স করা যায়।

ট্রিপল নাইনের পরিদর্শক মো. আনোয়ার সাত্তার বলেন, ‘ট্রিপল নাইনে কল পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সেবাটি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি। গত পৌনে তিন বছরে জনগণকে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৭টি কলের বিপরীতে ৭৬ শতাংশ পুলিশি সেবা, ১২ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস সেবা ও ১২ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর