সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
কমছে বন্যার পানি

তবু ঘুম কাড়ছে নদীভাঙন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ দিন বৃদ্ধির পর দেশের নদ-নদীর পানি আবারও কমতে শুরু করেছে। উন্নতি হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির। তবে এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে বিভিন্ন ফসল। এদিকে পানি কমলেও তীব্রতা বেড়েছে ভাঙনের। মুহূর্তের মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। সর্বস্ব হারানোর ভয়ে চোখে ঘুম নেই তিস্তা, যমুনা ও ধরলা পাড়ের বাসিন্দাদের। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৯টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও নাটোরের সিংড়ায় গুড় নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একদিনের ব্যবধানে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনার পানি ও কুড়িগ্রামে ধরলার পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। স্থিতিশীল রয়েছে গঙ্গা-পদ্মার পানি। ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ৪৮টিতে পানি বেড়েছে, ৪৭টিতে কমেছে, অপরিবর্তিত ছিল ৬টি নদীর পানি। এর আগের দিনও ৫৩টি স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পায়। এদিকে নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত বিভিন্ন স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতি বছরই নদীভাঙনে শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসছে। কিন্তু, ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো সমাধান করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বন্যা ও ভাঙন বাড়ছে। মাঝে মধ্যে নামমাত্র ড্রেজিং করলেও পরে নদীর মাটি নদীতেই যাচ্ছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

বগুড়া : জেলার সোনাতলা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে ওই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৯টি চরের ২৫ হেক্টর জমির গাঞ্জিয়া ও মরিচ খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরগুলোর ১৮টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার কৃষক দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তেকানীচুকাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শামছুল হক মণ্ডল জানান, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে থাকে চরাঞ্চলের মানুষ। এবার তিন দফা বন্যায় তাদের দুই চোখের রঙিন স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ : টানা দেড় মাসের বন্যায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে বন্যা কবলিতরা। আবার যমুনার পানি বাড়ায় ঘরবাড়ি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। করোনা থেকে চলতি বন্যায় কর্ম না থাকায় অনেক পরিবারের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। অন্যদিকে, তীব্র ভাঙন নদী তীরবর্তী মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।  বিগত তিন মাসে ভাঙনের শিকার হাজার হাজার পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে কেউ বাঁধে, কেউ খোলা আকাশের নিচে ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। জানা যায়, বন্যার তিন মাসে এক হাজারের বেশি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান। ভাঙনে একরাতের মধ্যে অনেক আমির পরিবার হয়েছে রাস্তার ফকির। বর্তমানে চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, সদর উপজেলার সিমলাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। সদর উপজেলার শিমলা গ্রামের বিধবা হাফিজা খাতুন জানান, ভাইয়ের চার ডেসিমাল জায়গার ওপর বসতভিটা করেছিলেন। নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন সেখান থেকে সরে যেতে বলছে। ঘর তোলার মতো এক টুকরো জায়গা নেই। হাফিজুর রহমান বলেন, শেষ সম্বল ফসলি জমিটুকু নদীর পেটে চলে গেছে। এখন কাজ-কর্ম নেই। একবেলা খাবার জুটলে আরেক বেলা জোটে না।

লালমনিরহাট : ধরলার পানি বিপৎসীমার সামান্য নিচে নেমে এসেছে। তবে চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট ও ফসলের জমি অধিকাংশ এখনো রয়েছে পানির নিচে। উজানের পানির সঙ্গে আসা বালুতে ঢেকে গেছে ফসলের খেত। ভাঙনের ভিটেমাটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। অনেকের ঘরে খাবার থাকলেও রান্না করতে পারছেন না উনুনে পানি ওঠার কারণে। অনেকের ঘরে নেই খাবারের জোগান। তিস্তা ও ধরলাপাড়ের অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। প্রতিদিন নদীগর্ভে যাচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগানসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থাপনা। দীর্ঘ হচ্ছে সরকারি রাস্তা ও অন্যের জমিতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুহারা পরিবারের সংখ্যা। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের চাষি ফজলু মোল্লা বলেন, ‘‘হামার যাওয়া আইসার আস্তা (রাস্তা) কোনাও ভাঙচে, উপায়ান্তর না প্যায়া কলার ভুরাত যাওয়া আসা কইবার নাগচি। কোনব্যালা কায় যে পানিত পরি যাই।’’ লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। দুর্গত এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত কিংবা উজানের পানি না এলে আপাতত নতুন করে বন্যার আশঙ্কা নেই।’’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর