মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাঙছে যমুনা নদীপাড়ে দুই বৃদ্ধের অনশন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

যমুনা নদীর কবল থেকে ফসলি জমি ও বসতভিটা রক্ষায় স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের দাবিতে তপ্ত রোধ ও বৃষ্টির মধ্যে দুই বৃদ্ধ নদীপাড়ে অনশন শুরু করেছেন। শুক্রবার থেকে দুই বৃদ্ধ এনায়েতপুর থানার ঘাটাবাড়ী এলাকায় নদীর তীরে পাটি বিছিয়ে খালি ঘায়ে অনশন করছেন। বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস না পেলে তারা অনশন ভাঙবেন না। দুই বৃদ্ধের অনশনে সহমত প্রকাশ করেছেন ভাঙনকবলিত শত শত মানুষ। অনশনকারী বয়োবৃদ্ধ ইয়াসিন প্রামাণিক জানান, ৮০ বছরের জীবনে সাতবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। ভাঙতে ভাঙতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। শেষ জীবনে শুধু ভিটাটাই রয়েছে। সেই ভিটাই যদি বিলীন হয়ে যায় তাহলে বেঁচে থেকে কি হবে? পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু বা সঠিক আশ্বাস না দিলে অনশন ভাঙব না।

আরেক বয়োবৃদ্ধ রহম আলী মোল্লা জানান, কয়েকদিন আগে নদীভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে  রেখেছি। শূন্য ভিটা পড়ে আছে। ভিটামাটির মায়ায় আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। নদীতে সব বিলীন হচ্ছে-কেউ আমাদের দুঃখ দেখছে না।

বাঐখেলা গ্রামের বাসিন্দা ডা. হাসেম আলী ও সমাজসেবক সামছুল মোল্লা জানান, নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রক্ষায় দুই বৃদ্ধ অনশন করছেন। শত চেষ্টা করেও অনশনকারী দুই বৃদ্ধকে খাবার কিংবা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। তারা এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তয়ানের সুখবর চান। দুজনের মধ্যে বৃদ্ধ রহম আলী একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, দুই বৃদ্ধ অনশন করছেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে তারা যেন অনশন থেকে বিরত থাকেন সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও জানান, ভাঙনরোধে আমরাও সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ী রক্ষায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ী রক্ষাবাঁধের কাজ শুরু করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এনায়েতপুর থানার দক্ষিণ অংশে ভাঙনের তা বলীলা চলছে। প্রতি বছরই নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় প্রচ  ভাঙন শুরু হয়। ইতিমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়েছে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ী, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বসতভিটা।

বিলীন হয়েছে হাট বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৪টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগা মাঠ ও তাঁত কারখানাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। সবকিছু হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবযাপন করছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। কিন্তু পাউবো শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে, কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর