বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নদীভাঙনে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা

মেঘনা অববাহিকার সব নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধির শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নদীভাঙনে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা

তীব্র আকার নিয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙন। এতে অন্তত চার শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নদ-নদীর পানি ঘন ঘন হ্রাস-বৃদ্ধিতে দেশের উত্তর প্রান্তের বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। প্রতিদিনই নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের শেষ সম্বল। ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবার নিয়ে ঠাঁই হচ্ছে সরকারি রাস্তা বা অন্যের জমিতে। শুধু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নেরই চার শতাধিক পরিবার গত দুই মাসে তিস্তার ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে। এতে ক্রমেই বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা। কয়েকদিন বৃদ্ধির পর বর্তমানে আবার হ্রাস পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি। তবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার সব নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে প্লাবিত হতে পারে মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল। গতকাল সকালে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস পাচ্ছে। স্থিতিশীল আছে গঙ্গা-পদ্মার পানি। সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আজ আপার মেঘনা অববাহিকার সব নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

গতকাল সকালে গুড় নদীর পানি সিংড়া স্টেশনে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ৫৮টিতে পানি বৃদ্ধি পায়।

এদিকে নদীর পানি ঘন ঘন হ্রাস-বৃদ্ধিতে যমুনা, ধরলা, তিস্তাসহ বেশ কিছু নদীতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভিটেমাটি হারিয়ে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছে কোনো না কোনো পরিবার। সব হারিয়ে এরই মধ্যে অনেক পরিবারের আশ্রয় হয়েছে বাঁধ, সরকারি সড়ক বা অন্যের জমিতে। শিশু-বৃদ্ধ নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো। এ ছাড়া ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য- গাইবান্ধা : গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গাইবান্ধায় ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও করতোয়ার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এগুলো এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। এদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার এলাকায় গত দুই মাসে তিস্তার ভাঙনে চার শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। হুমকিতে আছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিমাবাদ বি-এল উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিমাবাদ দাখিল মাদ্রাসা ও ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এখন ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘‘আমরা বার বার যোগাযোগ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু তারা নেয়নি। ফলে আমার বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। ভাঙন প্রতিরোধে গাইবান্ধায় পাউবো অফিসে যোগাযোগ করলে তারা কুড়িগ্রামের কথা, আর কুড়িগ্রামে যোগাযোগ করলে তারা বলে গাইবান্ধার কথা। আমরা কোন জেলার বাসিন্দা এখনো বুঝতে পারছি না।’’

গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, গাইবান্ধার মানচিত্রে হরিপুরের কাশিমবাজার থাকলেও গাইবান্ধা থেকে ওই এলাকা অনেক দূরে। ওই এলাকার দেখাশোনার দায়িত্ব কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আমরা তাদের সঙ্গে   যোগাযোগ করেছি। গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘‘আমি কয়েকবার কাশিমবাজারে গিয়েছি।  সেখানে মসজিদ ও রাস্তার জন্য টাকা দিয়েছি, তবে ভাঙন ঠেকাতে পারছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি বস্তা ফেলবে।’’

লালমনিরহাট : দুই দিন পর গতকাল ভোর থেকে আবারও ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে লালমনিরহাটের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে চরাঞ্চলের লাখো মানুষ। দুই দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে নেমেছিল। গতকাল সকাল থেকে আবারও পানি বাড়ায় বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। পানিতে তলিয়ে রয়েছে রাস্তা-ঘাট ও ফসলের জমি। উজানের পানির সঙ্গে আসা বালিতে ঢেকে গেছে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের ফসলের খেত। অনেকের ঘরে খাবার থাকলেও রান্না করতে পারছেন না। কারও ঘরে খাবার নেই। নদীপাড়ের মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। রাস্তা-ঘাট ডুবে থাকায় কলার ভেলাতে চলাচল করছে ৬৩ চরের মানুষ। গতকাল বিকালে তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ১৫ সেন্টিমিটার দিয়ে নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাউবো জানায়, রাতের মধ্যে লালমনিরহাটসহ রংপুর অঞ্চলে বন্যার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এদিকে পানি কমা ও বাড়ার কারণে লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলাপাড়ের অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন নদী পাড়ের মানুষ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিতে হচ্ছে সরকারি রাস্তা ও অন্যের জমিতে। দিনের পর দিন দীর্ঘ হচ্ছে বাস্তুহারা পরিবারের সংখ্যা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর