শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে বেকায়দায় ঢাকা

বন্ধ্যাকরণ করবে ডিএনসিসি, স্থানান্তর করছে ডিএসসিসি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কুকুর রাখার পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা কর্মসূচি। লিখিত আবেদন পড়েছে দুই পক্ষেই। ‘প্রাণবিক ঢাকা’ গড়ে তোলার দাবিতে পথে নেমেছেন কুকুরপ্রেমীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় কুকুর নিধনের পথে না গিয়ে স্থানান্তর ও বন্ধ্যাকরণের পথে হাঁটছে দুই সিটি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৩০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর ধাপে ধাপে ঢাকার বাইরে সরিয়ে নেওয়ার। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেওয়ারিশ কুকুর বন্ধ্যাকরণের। পশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার (পিএডব্লিউ) ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বলেন, কুকুর অপসারণ না করে বন্ধ্যাত্বকরণ টিকা দিলে কুকুরগুলো নগরবাসীকেও বিরক্ত করবে না। জানা গেছে, ২০১২ সালে উচ্চ আদালত কুকুর নিধনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারির পর ওই বছরের মার্চ মাসে অভয়ারণ্য নামে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে চুক্তি করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ওই বছর ১ এপ্রিল থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী বেওয়ারিশ কুকুর নিধন না করে বন্ধ্যাকরণ এবং টিকাদানের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কুকুর নিয়ন্ত্রণ করে। রাজধানীর রাস্তাঘাটে কুকুরের বংশবিস্তার রোধে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো উত্তর সিটির বসিলা এলাকায় অভয়ারণ্যের নিজস্ব ক্লিনিকে নিয়ে বন্ধ্যা করে ছেড়ে দেয়। এ কাজের জন্য অভয়ারণ্যকে বিনামূল্যে ওষুধ, যন্ত্রপাতি এবং অর্থ প্রদান করে সরকার। এ বাবদ দুই সিটি করপোরেশন দৈনিক খরচের ভিত্তিতে প্রতি মাসে অভয়ারণ্যকে ৮০ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো বলে জানা গেছে। পরে চুক্তি শেষ হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলিসহ সর্বত্রই বেড়েছে পথ কুকুরের সংখ্যা। রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের হিসাবে, ওই হাসপাতালে প্রতিদিন ঢাকা ও আশপাশের এলাকার দুই শতাধিক মানুষ কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। ২০১৮ সালে কুকুরের আক্রমণে আহত ৮১ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন হাসপাতালটিতে। ২০১৯ সালে রোগী ছিল ৭৬ হাজার। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৬ হাজার লোক কুকুরের আক্রমণের পর সেবা নিয়েছেন। বন্ধ্যাকরণ করবে ডিএসসিসি : ডিএনসিসি কুকুর বন্ধ্যাকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য ‘অভয়ারণ্য’ নামে একটি এনজিওর সঙ্গে আগের করা চুক্তি নতুন করে নবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসি একই সঙ্গে তার সীমানায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কুকুর বা যে কোনো প্রাণী অপসারণ কিংবা ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলে জানতে পারলে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। চলতি মাসের শেষের দিকে বা আগামী মাসের প্রথম দিকে এ কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘কুকুর স্থানান্তর করলে সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের ২০১৯ সালের আইনে কুকুর বা বন্যপ্রাণিকে কীভাবে দেখতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আমাদের মহাখালীতে যে মার্কেট রয়েছে, সেখানে কুকুরের জন্য আমরা একটা হাসপাতাল করেছি। আমি নিজেও করোনার সময় বিভিন্ন স্থানে কুকুরকে খাবার দিয়েছি। কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করতে হবে। তাদের জলাতঙ্কের ইনজেকশন       দিতে হবে।’ স্থানান্তর করবে ডিএসসিসি : ডিএসসিসি এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর আছে। ৩০ হাজার কুকুর শহরের বাইরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। ইতিমধ্যে শতাধিক কুকুর মাতুয়াইল এলাকায় স্থানান্তরও করা হয়েছে। তবে পশুপ্রেমী সংগঠনের বিরোধিতার কারণে এ কার্যক্রম বন্ধ আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, কুকুর স্থানান্তরের বিষয়ে নগরবাসী পক্ষে ও বিপক্ষে আবেদন করায় দ্রুত বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর