শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজশাহী নগরীতে একটি সিনেমা হলও নেই

হলের স্থানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, মার্কেট

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর শাকিব খান, নুসরাত ফারিয়া, সায়ন্তিকা অভিনীত ‘নাকাব’ সিনেমাটি শেষদিনের মতো চলেছিল রাজশাহীর উপহার সিনেমা হলে। এরপর ১২ অক্টোবর রাজশাহীবাসীকে ‘উপহার’ দেওয়া হয় শেষ সিনেমা হলটিও বন্ধ। নগরীর একমাত্র ও সর্বশেষ সিনেমা হল ‘উপহার’। ১৯৯১ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় প্রেক্ষাগৃহ ছিল ৫৫টি। তবে সরেজমিন জেলায় ওই সময় ২৫টি প্রেক্ষাগৃহের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র পাঁচটি সিনেমা হল।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এক সময় বিনোদনের মূল মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। রাজশাহীতে কোনো সিনেপ্লেক্সও গড়ে ওঠেনি। নগরীর জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলোর মধ্যে একে একে সব বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীতে প্রেক্ষাগৃহ ছিল ছয়টি। এগুলো হলো অলকা পরবর্তী নাম স্মৃতি, কল্পনা পরবর্তী নাম উৎসব, স্নিগ্ধা পরবর্তী নাম উপহার, বর্ণালী, লিলি এবং কাটাখালীর রাজতিলক। এগুলোর মধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রেক্ষাগৃহটি ছিল রাজশাহীর বর্ণালী সিনেমা হল। এর আসন ছিল এক হাজার ৩৭৩টি। ২০০৭ সালে শহরের সবচেয়ে পুরনো প্রেক্ষাগৃহ স্মৃতি সিনেমা হল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে রাজশাহীর ভিক্টোরিয়া ড্রামাটিক ক্লাবের উদ্যোগে নাট্য আন্দোলন এগিয়ে নিতে নির্মিত হয়েছিল ‘রাজা প্রমথনাথ টাউন হল’। প্রতিষ্ঠা থেকে সেখানে নিয়মিত বাংলা সাহিত্য ও নাট্যচর্চা হতো। ১৯১৯ সালের ২ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ক্লাবের কাছ থেকে হলটি কিনে নেয় রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন। পরে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে অলকা সিনেমা হল যাত্রা শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে স্মৃতি সিনেমা হল নামে হলটির নামকরণ    হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক আফরাউজ্জমান খান চৌধুরী ওরফে বাবুল ও তার ছোট ভাই আবদেল নাসের চৌধুরী ওরফে রুবেল হলটি চালাতেন। পরে ওই হল ভেঙে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন বহুতল ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে। নগরীর আলুপট্টির উৎসব সিনেমা হলে ২০১০ সালের জুলাইয়েও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। পরে তা ভেঙে স্বচ্ছ টাওয়ার নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। নগরীর কাদিরগঞ্জ ও আমবাগানের মধ্যবর্তী এলাকায় ছিল বর্ণালী সিনেমা হল। বর্তমানে হলটি না থাকলেও শহরের ওই এলাকার নামকরণ আছে বর্ণালীর মোড় নামেই। মোল্লাপাড়ার লিলি সিনেমা হলটিও আর নেই। দুর্গাপুরে নার্গিস, নওহাটায় বাবুল, তানোরে আনন্দ, কেশরহাটে দিনান্ত, বাগমারায় শাপলা সিনেমা হলে ঈদ বা পূজা উপলক্ষে মাঝেমধ্যে সিনেমা চালানো হয়। তবে বছরের অধিকাংশ সময়ই তা বন্ধ থাকে। নগরীর বর্ণালী হলের সর্বশেষ মালিক সারোয়ার মোর্শেদ জানান, মন্দার কারণেই বর্তমানে সিনেমা হল চালু রাখা যাচ্ছে না। দেশের সিনেমার মান নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, বিভাগীয় শহরে একটি সিনেমা হলও নেই, এটি মেনে নিতে কষ্ট হয়। রাজশাহীকে আধুনিকভাবে গড়ে তোলার জন্য নতুন করে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর ভিতরে একটি আধুনিক মানের সিনেমা হল রাখা যেত। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ বলেন, এভাবে সব সিনেমা হল ভেঙে ফেলায় নতুন প্রজন্ম সিনেমা হল আর কখনো চিনবে না; পরিচয়ও ঘটবে না। তাই ঐতিহ্য হিসেবে হলেও বিভাগীয় শহরে একটি সিনেমা হল নির্মাণের দাবি তার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর