রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ নদীতে বিপৎসীমার ওপরে বন্যার পানি

আবারও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া বন্যা এখনো ভোগাচ্ছে দেশের লাখো মানুষকে। সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে তিন মাসের মধ্যে পঞ্চম দফা বন্যা আঘাত হেনেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল ও চরগুলো। এক দিনের ব্যবধানে আরও একটি নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করায় গতকাল পাঁচটি নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেই সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি। একের পর এক বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আবারও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের। কাজ না থাকায় দেখা দিয়েছে অর্থসংকট। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বানভাসি মানুষগুলো। সেই সঙ্গে নদীভাঙনে প্রতিদিন ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসছেন অসংখ্য মানুষ।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল সকালে জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৬০টিতে পানি বেড়েছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা, যমুনা, গুড়, আত্রাই ও যদুকাটা নদীর পানি। তবে ধরলা ও যদুকাটা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মার পানি এখন স্থিতিশীল রয়েছে। গঙ্গা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার সব প্রধান নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনার পানি সামান্য কমে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল যমুনার পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় চরের পাঁচটি ইউনিয়নের বোহাইল, ধারাবর্ষা, শনপচা, ইন্দুরমারা, জামথল, আনন্দবাজার টেংড়াকুড়া, পাটেরদহ, মানিকদাইড় ও বহুলাডাঙ্গার বেশিরভাগ এলাকায় হাঁটু পানি উঠেছে। সম্প্রতি বন্যার পানি নেমে গেলে চাষিরা চরের জমিতে আমন ধান, চরের চিকা ধান ও হাইব্রিড মরিচ চাষ করেছিল। বেশিরভাগ জমিই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে যমুনা ও বাঙালি নদীতে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেল মিয়া জানান, পানি বৃদ্ধিতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা করা হচ্ছে। এর আগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি পঞ্চম দফা বাড়ায় জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দফায় দফায় বন্যায় মানুষের ঘরের বেড়া, খুঁটি ও টিনে পচন ধরেছে। ঘরে ভিতরের মাটি সরে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র। বন্যা কবলিতদের মধ্যে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার হচ্ছে অনেক পরিবারে। অন্যদিকে, নতুন করে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির আমন ধান, শাক-সবজি, মরিচ ও বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়ায় চৌহালী-এনায়েতপুরে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে যমুনার অরক্ষিত অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আরও ২৪ ঘণ্টা পানি বাড়বে, এরপর কমতে পারে।

কুড়িগ্রাম : নদ-নদীর পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বিকালে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধরলার পানি এখনো বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, উলিপুর, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার শতাধিক চর ও দ্বীপচর প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী রয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। ডুবে গেছে বেশ কিছু এলাকার কাঁচা সড়ক। প্রায় ৭ হাজার ৮ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর