শিরোনাম
সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাট ফাঁকি চট্টগ্রামের ২৫৩ প্রতিষ্ঠানে

মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের অভিজাত শপিংমল মিমি সুপার মার্কেটের ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে গতকাল মামলা করেছে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সংস্থাটি বলেছে, ওই শপিংমলের ২৬৩টির মধ্যে ২০৩টি প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না। অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নতুন ভ্যাট আইনের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিলেও বেশিরভাগ আইন পরিপালন করছে না। গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য দিয়েছেন ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।  তিনি বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দার জরিপ অনুযায়ী চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ, বায়েজিদ বোস্তামি সড়কে অবস্থিত মিমি সুপার মার্কেটে ২৬৩টি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছে। তারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছে। কেউ কেউ পণ্য আমদানির সঙ্গেও জড়িত। কিন্তু নতুন আইনে ভ্যাট নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৬০টি। বাকি ২০৩টির কোনো নিবন্ধন নেই। তারা ভ্যাটও দেয় না। গোপন তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাট আহরণ করলেও, তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। এসব প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ভ্যাট অফিসে দাখিলপত্রও দেয় না। এতে দেখা যায়, তারা আইন ভঙ্গ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার জরিপে আরও দেখা যায়, শপিংমলের ৬০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনভুক্ত হলেও অনেকে প্রকৃত বিক্রয় অনুযায়ী রিটার্ন ও ভ্যাট পরিশোধ করছে না। এদের মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট সনদ ঝুলিয়ে রেখেছে। অবশিষ্ট ৫০টি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান স্থানে ভ্যাট সনদ পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন সনদ দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক, যাতে ক্রেতা বুঝতে পারেন তিনি সঠিক স্থানে ভ্যাট দিচ্ছেন। আইনের বিধান অনুসারে নিবন্ধন গ্রহণ না করায় ভ্যাট গোয়েন্দা গতকাল অনিবন্ধিত ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে মামলা দায়ের করেছে। একই সঙ্গে নিবন্ধিত ৬০টির মধ্যে ৫০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন সনদ ঝুলিয়ে না রাখায় ভ্যাট আইনে তাদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম মামলা করা হয়েছে। এ অনিয়মের দায়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তবে ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনিবন্ধিত ২০৩টি মামলা দায়েরের অভিযোগের পাশাপাশি ব্যবসার শুরু থেকে তাদের প্রকৃত খরচের ভিত্তিতে পূর্বের ফাঁকিকৃত ভ্যাট হিসাব করে বকেয়া ও মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদসহ জরিমানা আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়েছে। ভ্যাট আইনে দায়েরকৃত মোট ২৫৩টি মামলা আইনানুগভাবে ন্যায়নির্ণয়নের জন্য ইতিমধ্যে অভিযোগসমূহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তার দল ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিমি সুপার মার্কেট সরেজমিন পরিদর্শন করে। এ সময় মিমি সুপার মার্কেট মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপ কাজে সহযোগিতা করেন। 

ভ্যাট গোয়েন্দাদের মতে, চট্টগ্রামের বড় শপিংমলের দোকানগুলোর মধ্যে ৭৮ ভাগই ভ্যাট দেয় না; দেশের অন্যান্য মার্কেট ও খুচরা পর্যায়েও এ চিত্র বিরাজ করছে মর্মে ভ্যাট গোয়েন্দাদের ধারণা। দেশের মধ্যে প্রতিযেগিতামূলক ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সব ভ্যাটযোগ্য ব্যবসাকে দ্রুত ভ্যাট ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবসায়ী ও ভ্যাট কমিশনারেটের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য শপিংমল, মার্কেট ও বিভিন্ন স্থানে ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপকাজ অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর