সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বাড়ছে কুকুরে কামড়ানো রোগী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা। নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ২০৪ জন পর্যন্ত কুকুরে কামড়ের রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বাইরেও বিপুলসংখ্যক মানুষ থাকেন চিকিৎসার বাইরে। একটি কুকুর বছরে গড়ে ১২টি করে বাচ্চা দেয়। যার মধ্যে মারা যায় ১০ ভাগ। কুকুর নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক হারে এর সংখ্যা বাড়ছে। আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়। গ্লোবাল অ্যালায়েন্সে ফর রেবিজ কন্ট্রোল তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র     এবং যুক্তরাজ্যের দফতর থেকে দিবসটি পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। এবারের ১৪তম দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইন্ড রেবিস : কোলাবরেট ভ্যাকসিন’। দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো- জলাতঙ্ক রোগের বিষয়ে পর্যালোচনা এবং জনসচেতনতা তৈরি।  জানা যায়, এক সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কুকুর নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করত। তবে ২০১২ সালে ‘নির্বিচার কুকুর নিধন অমানবিক’ উল্লেখ করে উচ্চ আদালত তা বন্ধের নির্দেশ দেয়।

এরপর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কুকুরকে বন্ধ্যা (প্রজননক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া) করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে এটিও বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে কুকুর নিধন ও বন্ধ্যা কার্যক্রম কোনোটাই নেই। চট্টগ্রামে জেনারেল হাসপাতাল এবং চসিক জেনারেল হাসপাতালে কুকুরে কামড়ের চিকিৎসা দেওয়া হয়। চসিক জেনারেল হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে আট থেকে ১০ জন কুকুরে কামড়ের চিকিৎসা নেয় এবং সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রতি মাসে চিকিৎসা নেয় প্রায় ১৯৪ জন। জেনারেল হাসপাতালে গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে মার্চে ১৫৩ জন, এপ্রিলে ১৮৯ জন, মে ১৭৬ জন, জুন ১৭৮, জুলাই ২২১, আগস্ট ২৯৭ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৩ জন।

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই কুকুরে কামড়ের রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। পর্যায়ক্রমে কুকুরে কামড়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’

চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কুকুরে কামড়ের রোগী বাড়ছে। ফলে অনেকেই আতঙ্কে থাকে। কুকুর কামড়ের রোগীকে প্রথম একটি, তৃতীয় দিন, সপ্তম দিন, ১৪তম দিন ও ২৮তম দিনে একটি করে ইনজেকশন দেওয়া হয়।’

জানা যায়, জলাতঙ্ক হলো ভাইরাস গঠিত একটি রোগ, যা সাধারণত কুকুর, শেয়াল, বাদুড় জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। লালা বা রক্তের মাধ্যমে এ ভাইরাস এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীর দেহে ঢুকতে পারে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের প্রাণীর মধ্যেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কুকুরে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই জলাতঙ্ক রোগের কারণ। ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই কুকুরের কামড় থেকে জলাতঙ্কের জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। দেশে প্রতি বছর সাড়ে তিন লাখ লোক কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে জ্বর, ক্ষুধামন্দা, কামড়স্থানের অনুভূতিতে পরিবর্তন যেমন চিনচিন, ঝিনঝিন, কনফিউশন, অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা, লালারসের ক্ষরণ বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। তবে বেশি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ঢোক গিলার সময় ডায়াফ্রাম, রেসপিরেটোরি মাসল ও কণ্ঠনালির তীব্র ব্যথাযুক্ত সংকোচন হয়। বিশেষ করে পানি পানের চেষ্টা করলে ডায়াফ্রাম ও অন্যান্য ইন্সপিরেটোরি মাসলের তীব্র সংকোচন ও ব্যথা হয়। ফলে রোগীর মধ্য হাইড্রোফোবিয়া তৈরি হয়। এই অবস্থার জন্য বাংলায় এ রোগকে জলাতঙ্ক নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রোগীর ডিলিউশন, হ্যালুসিনেশন ও পাগলামি, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়ানোর অক্ষমতা ও চেতনাশূন্যতা দেখা দেয়।

সর্বশেষ খবর