শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

আশ্বিনের বন্যায় ম্লান হাসি

প্লাবিত ৭ জেলা বিপৎসীমার ওপরে ৯ নদীর পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবারও হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। দেড় মাসের দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পর ফের আশ্বিনের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সাতটি জেলা। আবারও ডুবে গেছে কৃষকের কষ্টের ফসল। বন্যার হুমকিতে রয়েছে আরও ৯টি জেলা। এক দিনের ব্যবধানে পদ্মা ও ঘাঘট নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করায় গতকাল ৯টি প্রধান নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও ৯টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৮টি প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। আশ্বিন মাসে জমিতে বিভিন্ন ধানসহ শীতকালীন আগাম সবজির আবাদ থাকায় এবারের বন্যায় কৃষক ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বাড়ায় ফের বন্যা আঘাত হেনেছে উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। বন্যা মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে যাচ্ছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বগুড়া, নাটোর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নওগাঁ, রাজবাড়ী ও রংপুরের লাখো মানুষ। ডুবে গেছে ফসলের খেত। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। ভাঙছে সড়ক ও ব্রিজ। কুড়িগ্রাম ও নাটোরে ভেসে গেছে দেড় হাজারের বেশি পুকুরের মাছ। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকালে কুড়িগ্রামে ধরলা, রংপুরে যমুনেশ্বরী, বগুড়ায় যমুনা ও করতোয়া, নওগাঁয় আত্রাই ও ছোট যমুনা, নাটোরে গুড়, গাইবান্ধায় ঘাঘট, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেই সঙ্গে যশোরে কপোতাক্ষ, মুন্সীগঞ্জে পদ্মা, মানিকগঞ্জের যমুনা, সিরাজগঞ্জে হুরাসাগর ও যমুনা, টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী, নেত্রকোনায় কংশ, জামালপুরে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, নীলফামারীতে তিস্তা ও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে, তবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মার পানি। নাটোরের সিংড়ায় গুড় নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ও বগুড়ার চকরহিমপুরে করতোয়ার পানি ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চর ও নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি অনেক উঁচু এলাকাও তলাতে শুরু করেছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নাটোর : সিংড়া পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা পরিষদ, থানা, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ভূমি অফিস, সিংড়া বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পোস্ট অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বন্যার পানি ঢুকেছে। সিংড়া-বলিয়াবাড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল  দেখা দিয়েছে। শোলাকুড়া মহল্লায় মাদ্রাসাসংলগ্ন এলাকায় রাস্তা ধসে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বানভাসিদের জন্য ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পৌরসভার ৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সচেতন মহলের দাবি, অবৈধ সৌতিজাল এবং নদীর শাখা প্রশাখায় বাঁধ নির্মাণের ফলে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস জানিয়েছে, বন্যায় ২৫০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ও ৭ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ১৩০০ পুকুরের মাছ। সিংড়া  পৌরসভার মেয়র মো. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বন্যা মোকাবিলায় আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। বিভিন্ন স্থানে নিজ অর্থায়নে বালুর বস্তা সরবরাহ করছি।

কুড়িগ্রাম : ধরলার পানি কিছুটা কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদী অববাহিকার চর ও দ্বীপচরের বানভাসি মানুষগুলোর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। জেলার ১৮ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির ফসল ফের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছে। অনেকেই ধারদেনা করে দ্বিতীয় দফা আমন আবাদ করেছিল। কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এ বন্যায় জেলার ৪১০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছ ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯৪ লাখ টাকার। এদিকে জেলার ৬৩টি পয়েন্টে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাটেশ্বরীর জগমনের চর এলাকায় গত এক সপ্তাহে আড়াই শতাধিক বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ৬৩ পয়েন্টে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে। তবে সদরের ভোগডাঙ্গা এলাকায় ও তিস্তার কাসেম বাজার এলাকায় ভাঙন ঠেকানো কষ্টসাধ্য হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর