শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

কষ্টের শেষ নেই বানভাসি মানুষের

১৪ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে নদ-নদীর পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

একদিনের ব্যবধানে এবার বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে গতকাল ৯টি নদ-নদীর পানি দেশের ১৪টি পানি সমতল স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নি¤œাঞ্চল। আবারও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু সড়কে। টানা দেড় মাসের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগে ফের বন্যার আঘাতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বানভাসি হতভাগা মানুষ। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল সকালে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ৫৬টিতে পানি বেড়েছে। ৯টি প্রধান নদ-নদীর পানি ১৪টি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বাড়ছে। গঙ্গার পানি স্থিতিশীল থাকলেও বাড়ছে পদ্মার পানি। গত পরশু পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি হ্রাস পেলেও গতকাল থেকে ফের বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। নদ-নদীর পানি অব্যাহত বাড়তে থাকায় আজও দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকার নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে। গতকাল শুধু যমুনার পানিই ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়াও বিপৎসীমার ওপরে ছিল ঘাঘট, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, ছোট যমুনা ও পদ্মার পানি। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য- বগুড়া : সারিয়াকান্দির কাছে যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উভয় নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলের খেত ডুবে গেছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে আরও কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সরেজমিন দেখা গেছে, উভয় নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকার আমন ধান, শাকসবজি ও চরাঞ্চলের কৃষকের আউশ, মরিচ, রোপা আমন, বীজতলা, শাকসবজি ও গাইঞ্জা ধানের আবাদ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নতুনভাবে বন্যাক্রান্ত হয়েছে সারিয়াকান্দি পৌরসভার দক্ষিণ হিন্দুকান্দি, ছাগলধরা, ডোমকান্দি, নারচি নিজ বরুরবাড়ী, হাটশেরপুর ইউপির হাসনাপারা ও শাহানবান্দা। এ ছাড়াও চর এলাকার বোহাইল, কর্নিবাড়ী, কাজলা, চালুয়াবাড়ী, হাট শেরপুর ও সদর ইউনিয়নের নিচু এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। নাটোর : সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানির প্রবল স্রোতে পৌরসভার শোলাকুড়া এলাকার ১৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫টি বাড়ি আংশিক বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি কমলেও ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। আতংকে মানুষ বাড়ির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গতকাল সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়,  আত্রাই নদীর পানি সিংড়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার বিপৎসীমার ১১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল তা কমে ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। হঠাৎ পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন বেড়েছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাঙন রোধে ১০ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। উপজেলার  কতিপয় অসাধু ব্যক্তি নদীতে অবৈধ সুতিজাল দিয়ে পানির স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ সুতি উচ্ছেদ ও নিয়মিত মামলা দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি পঞ্চম দফা বেড়ে পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। জেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন মাসের বন্যায় কৃষকের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান, পাট, সবজি, বাদাম ও মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। প্রায় ৪০ হাজার তাঁতের ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক তাঁত পানিতে তলিয়ে আছে। কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার জীবন কাটাচ্ছে। প্রথম দফা বন্যায় শুধু ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও এরপর সরকারি আর কোনো সহায়তা পাননি বন্যা কবলিতরা। হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে বানভাসিরা। পানি বাড়ায় আবারও কেউ কেউ বাঁধে ঝুপড়ি তুলে বসবাস শুরু করছে। অনেকে পানির মধ্যেই রয়েছে।

গাইবান্ধা : জেলা সদরে ৫টি, সুন্দরগঞ্জে ১৫টি, ফুলছড়িতে ১৫টি, সাঘাটায় ২০টি, পলাশবাড়ীতে ১৫টি  গোবিন্দগঞ্জে ২৫টি গ্রামসহ প্রায় ৮০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে অনেকের বসতবাড়ি। চলতি বছরে পর পর চার দফা বন্যার ধকল কাটাতে না কাটাতেই পঞ্চম দফা বন্যায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে  গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা। গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে গেছে। পৌরসভার হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি বেড়ে আবারও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু নদী পাড়ের ও চরের বাড়িঘর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চর ও দ্বীপচরের বানভাসি মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। গোখাদ্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ধরলা, তিস্তা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্রের ৬৩টি পয়েন্টে প্রচ- নদীভাঙন চলছে। তিস্তা নদীর ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে উলিপুরের থেতরাই এলাকার কাশেমবাজার ও সদর উপজেলার ভোগডাঙায়। এসব এলাকায় প্রতিদিন নদীভাঙনে বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দিরসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর