সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভালো নেই শিশুরা

বিশ্ব শিশু দিবস আজ

জিন্নাতুন নূর

শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদে বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করার পরও কোমলমতি শিশুরা ভালো নেই। করোনা মহামারীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় বাসাবাড়িতে একরকম বন্দীদশায় সময় পার করছে শিশুরা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মহামারীর সময়ে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণের পর অনেক শিশুকে আবার নৃশংসভাবে হত্যাও করা হয়েছে। বাবা-মায়ের কলহের জেরে প্রাণ দিতে হচ্ছে অনেক কোমলমতিকে। দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকদের কেউ কেউ চাপে পড়ে কন্যাশিশুদের বাল্যবিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। আর স্কুল না থাকায় অভিভাবকের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় কিছু পরিবারে শিশুরাও ভারী কাজে নেমে পড়েছে। অর্থাৎ যেখানে হেসে-খেলে আনন্দে শৈশব কাটানোর কথা, সেখানে শিশুরা পার করছে কঠিন এক সময়। এ অবস্থায় আজ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উদ্্যাপিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘শিশুর সাথে শিশুর তরে, বিশ্ব গড়ি নতুন করে’।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩২৪ জন শিশু। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয় ৪৯ জন। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১ জন প্রতিবন্ধী শিশু। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ৮৪ জনকে।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১৮ জনকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে ৭ জন। এ সময় পর্নোগ্রাফির শিকার হয় ১৬ শিশু। আর যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় ১০৪ জন শিশুকে। ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ছয় বছরের এক শিশুকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ফলের বাগানে নিয়ে গিয়ে আবদুল খালেক (৩৫) নামের এক ব্যক্তি ধর্ষণ করে। এমনকি ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য নির্যাতিত শিশুকে হুমকিও দেয় খালেক। ঘটনার কয়েক দিন পর শিশুটির শরীরে ব্যথা অনুভূত হলে শিশুটি তার মাকে বিষয়টি খুলে বলে। করোনার এ সময়ে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে বাল্যবিয়ে। দেশে বাল্যবিয়ে রোধে নিয়োজিত হেল্পলাইন সেন্টার ১০৯৮-এর দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, মহামারীতে বাল্যবিয়ে রোধে ফোনকলের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। হেল্পলাইনটির ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. মোহাইমেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে চাইল্ড হেল্পলাইনে বাল্যবিয়ে-সংক্রান্ত ৪৫০টি ফোনকল আসে। অথচ মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৩২২। তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে আমরা বাল্যবিয়ে-সংক্রান্ত ১০০টি কল পেতাম, এখন সেখানে ১৮০টি ফোন পাচ্ছি।’ করোনার এ সময়ে মা-বাবার কলহের কারণে অনেক শিশুকে প্রাণও হারাতে হচ্ছে। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে মা-বাবার হাতে প্রাণ দিয়েছে ১৫ জন শিশু। এর মধ্যে ২১ জন নির্যাতনের শিকার হয়। চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর গোরানে একটি ফ্ল্যাটে দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে কামরুন্নাহার পপি (৩৫) নামের এক মা নিজে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

জানা যায়, পপি তার স্বামী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরেই এমনটি করেছেন। করোনার মহামারীতে কোমলমতিরা আশঙ্কাজনক হারে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যে, স্কুল বন্ধ ও পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অনেক শিশুর শ্রমে যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ‘কভিড-১৯ ও শিশুশ্রম : সংকটের সময় পদক্ষেপের সময়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে শ্রমে থাকা শিশুদের হয়তো আরও বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। তাদের আরও খারাপ পরিবেশে কাজ করতে হতে পারে। তাদের মধ্যে আরও বেশিসংখ্যক শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। মহামারীতে শিশুদের মানসিক অবস্থাও খুব বেশি ভালো নেই। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহতাব খানম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুরো বিশ^ একটি সাইকোলজিক্যাল প্যানডেমিকের দিকে যাচ্ছে। আর বিশে^র সঙ্গে বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের ওপরও মানসিক চাপ পড়ছে। কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভিভাবকদের সন্তানের মনের কষ্ট বুঝতে হবে। আর শিশুদের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর