বন্দরের প্রাণখ্যাত কর্ণফুলী নদীর তীরে নিয়ম না মেনে ২০১২ সালের দিকে স্থাপন করা হয় অবৈধ ইটভাটা। ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল নদীর নাব্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি এবং পরিবেশ দূষণের অভিযোগে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি আইন অমান্য করে সিটি করপোরেশন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সাড়ে সাত বছর পার হলেও অবৈধ এ ইটভাটাটি উচ্ছেদ করা হয়নি। বর্তমানে ইটভাটাটি পরিত্যক্ত স্থাপনার মতো পড়ে আছে। অভিযোগ আছে, এটি উচ্ছেদ না হওয়ায় আশপাশের এলাকা নতুন করে দখল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাতের আঁধারে এখানে জমে মাদকাসক্তের আড্ডা। তাই স্থানীয়দের দাবি এটি দ্রুত উচ্ছেদের। জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রটেকশন’ প্রকল্পের কাজ পায় আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন। ২০১১ সালের মাঝামাঝি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিস’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট ড্রেজিং কাজের পাশাপাশি কর্ণফুলীর পাড়ে ইটভাটা নির্মাণ করে। কিন্তু ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম সরেজিমন পরিদর্শনে এসে দেখেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে উত্তোলন করা মাটি ব্যবহার করে শাহ্ আমানত সেতুর উত্তর-পূর্ব পাড়ের ভাটায় ইট নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই নদীর তীরে ইটভাটা স্থাপন করে পরিবেশ দূষণ, নাব্য বিঘœ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে নদী দূষণের অপরাধে প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসকে এক কোটি টাকা জরিমানা ও প্রচলিত আইন অমান্য করে নগর এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে কিছু দিন ইটভাটার কার্যক্রম চলে। পরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রটেকশন প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম জাকারিয়া বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরের সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। সে অনুসারে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ চলমান। পর্যায়ক্রমে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সে হিসেবে ইট ভাটাটিও উচ্ছেদ করা হবে। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে উচ্ছেদ সংক্রান্ত সভায়ও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।’খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসন থেকে ইটভাটাটি নির্মাণে কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদফতর ঢাকার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুধু পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়েছিল। পরে ওই ছাড়পত্রটিও বাতিল করে পরিবেশ অধিদফতর। এরপর ইটভাটাটি উচ্ছেদে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। অন্যদিকে, ইটভাটাটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে ২০১২ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। অভিযোগের সূত্র ধরে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের তৈরি করা ২ হাজার ১৮৯টি অবৈধ স্থাপনার তালিকাও আছে এ ইটভাটা।