বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্যার পানি নামলেও কাঁদাচ্ছে নদী ভাঙন

বদলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলার মানচিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যার পানি নামলেও কাঁদাচ্ছে নদী ভাঙন

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার নদীগুলো ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। চার দিন আগে ৯টি নদী বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও গতকাল ২টি নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে সামনে হাজির হয়েছে নদী ভাঙন। বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বদলে যাচ্ছে অনেক জেলার মানচিত্র। রাতারাতি ভিটামাটি, আবাদি জমি হারিয়ে পথে বসছে অনেক ধনাঢ্য পরিবার। রংপুরে মহিপুর-কাকিনা সংযোগ সড়কের প্রায় ১০০ ফুট ব্লক ধসে পড়েছে তিস্তার ভাঙনে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল সকালের তথ্যানুযায়ী, আপার মেঘনা অববাহিকা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানিসমতল স্টেশনের ৩০টিতে পানি বেড়েছে, কমেছে ৭১টি স্টেশনের পানি। বর্তমানে শুধু নাটোরের সিংড়ায় গুড় নদী ও বগুড়ার চক রহিমপুরে করতোয়ার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দুটি নদীরই পানি কমেছে। এদিকে বারবার নদ-নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধিতে বাড়ছে ভাঙন। তিস্তার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ধরলা, যমুনা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদেও ভাঙন তীব্র হয়েছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠছে জমির পচে যাওয়া ফসল, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- সিরাজগঞ্জ : পানি কমায় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পঞ্চম দফা বন্যায় নতুন করে কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চর ও নি¤œাঞ্চলের ৩ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৯৩১ হেক্টর জমির মাষকলাই, ২৩৪ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি, ৮০ হেক্টর জমির বাদাম ও ৬৮ হেক্টর জমির মরিচ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল হারিয়ে কৃষক চোখে যেন অন্ধকার দেখছে। সেই সঙ্গে এনায়েতপুরের আড়কান্দি থেকে পাঁচিল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। চৌহালীর প্রায় দশটি পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। তাঁতগুলো দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থেকে নষ্ট হয়েছে সরঞ্জাম। তাঁত বন্ধ থাকায় বিপাকে তাঁতীরা। কুড়িগ্রাম: নদ-নদীর পানি কমে পঞ্চম দফা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অন্যের জমিতে, বাঁধে, সড়কে মানবেতর জীবন-যাপন করছে ভাঙনে সব হারানো মানুষগুলো। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পানি কমায়  ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের ৬৩টি পয়েন্টে প্রচ- নদী ভাঙন চলছে। তিস্তা নদীর স্রোতের তোড়ে উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ এলাকার কুড়িগ্রাম অংশে প্রবল নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। রংপুর: জেলার গঙ্গাচড়ায় শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতুর মহিপুর-কাকিনা সংযোগ সড়কে ফের  ভাঙন দেখা দিয়েছে। সংযোগ সড়কটির প্রায় ১০০ ফুটজুড়ে ব্লক ধসে পড়েছে। এতে যে কোনো সময় লালমনিরহাট জেলার কাকিনার সঙ্গে রংপুরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকৌশলী এ জেড এম আহসান উল্লাহ ভাঙনের কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁধ ভেঙে তিস্তা দুটি ভিন্ন চ্যানেলে প্রবাহিত হওয়ায় শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতুর উত্তর প্রান্তে নির্মিত তিনটি সেতু ও সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়কের ভাঙন রোধে আপাতত বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, শুধু বালুর বস্তা নয়, এখনই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে ওই সড়ক রক্ষা করা যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর