বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

আর্থিক অনটনে সিলেটের ১০ হাজার মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী পরিবার

সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছেন অনেকেই

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

একসময় সচ্ছলভাবে চলার পাশাপাশি সাহায্য সহযোগিতা করতেন অসচ্ছল আত্মীয়স্বজনদের। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কেড়ে নিয়েছে তাদের সেই সুদিন। ছয় মাস ধরে দেশে আটকা পড়া সিলেটের মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীদের ঘরে ঘরে চলছে অনটন। বেকার অবস্থায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। বিদেশ ফিরে যাওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ঋণ করে টানছেন অনটনের সংসার। এই অবস্থা সিলেটের মধ্যপ্রাচ্য ফেরত অন্তত ১০ হাজার পরিবারের। এর মধ্যে পাঁচ হাজার প্রবাসী সরকারি সহযোগিতার জন্য কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আবেদন করেছেন। জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকে সিলেট বিভাগের চার জেলায় অন্তত ২০ হাজার প্রবাসী ছুটিতে দেশে ফিরেন। দুই-তিন মাস ছুটি কাটিয়ে তারা ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েন। ছয় মাস ধরে তারা দেশে আটকা পড়ায় আয় রোজগারহীন হয়ে পড়েন ওইসব প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত হওয়ায় ছয় মাস আয়-রোজগার না থাকায় সংসারে অনটন দেখা দেয়। এই অবস্থায় আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে তারা ঋণ করে চলতে হচ্ছে।  এদিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও এখনো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সঙ্গে ফ্লাইট শুরু না হওয়ায় তারা ফিরে যেতে পারছেন না। ইতিমধ্যে অনেকের ভিসা ও আকামার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য নিয়োগকর্তার (কফিল) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদেরকে না যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। করোনা সংকটের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানাচ্ছেন অনেক কফিল। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসীও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় প্রবাসীদের পরিবারগুলোতে নীরব হাহাকার চলছে। লোকলজ্জার ভয়ে কারও কাছে সহযোগিতাও চাইতে পারছেন না। এদিকে দেশে আটকা পড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আবেদন করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সরকারি এই আহ্বানের পর সিলেটে প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। তবে প্রবাসীদের কী পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হবে তা এখনো বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

 সিলেট জেলা জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের নির্দেশ মতো তারা শুধু আবেদনপত্র জমা নিয়েছেন। পরবর্তীতে সরকারি ঘোষণা এলে সে অনুযায়ী প্রবাসীদের সহযোগিতা করা হবে।

কাতার ফেরত সিলেটের কানাইঘাট প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতির শুরুতে তিনি দেশে এসেছিলেন। আড়াই মাস ছুটি কাটিয়ে তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ থাকায় তিনি ফিরতে পারেননি। ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি কাতার কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কফিল তাকে জানিয়েছেন, করোনার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই অবস্থায় কাতার যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। ছয় মাস ধরে দেশে অবস্থান করায় ঋণ করে চলছেন বলে জানান দেলোয়ার।

সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মীর কামরুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তবে সহায়তার ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর