বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই প্রকল্পের টাকা মাটির নিচেই শেষ

সাধারণ গ্রন্থাগার ও প্রথম শহীদ মিনার

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর ঐতিহ্য রক্ষায় নেওয়া দুই প্রকল্পের টাকা মাটির নিচেই খরচ হয়ে গেছে। সরকারের বরাদ্দ ৪ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেলেও কয়েকটি থাম ছাড়া কিছুই গড়ে ওঠেনি। রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার ও দেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্প দুটি এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারের নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষে হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। এর মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে কেবল পাইলিংয়ের কাজ। এতে খরচ হয়ে গেছে ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় অনুদানের টাকা আছে ২ কোটি ৫৭ লাখ। এ অবস্থায় বন্ধ আছে নির্মাণকাজ। সিটি করপোরেশন বলছে, নির্মাণকাজ শেষ করতে আরও প্রায় ২ কোটি টাকার প্রয়োজন। তারা নিজেরাই এ টাকার ব্যবস্থা করবে। রাজশাহী নগরীর মিয়াপাড়ায় ১৮৮৪ সালে দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায় গ্রন্থাগারের জন্য ৪৪ শতাংশ জমি দান করেন। এখানেই তৈরি হয়েছিল দ্বিতল ভবন। এর খরচ বহন করেছিলেন কাশিমপুরের জমিদার কেদার প্রসন্ন লাহিড়ী। ভারত সরকারের অনুদানে এ গ্রন্থাগারের স্থলে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঐতিহাসিক ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। বইগুলো রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী এ ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজশাহীতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এ প্রকল্পের অধীনে পুরনো গ্রন্থাগারের জায়গায় ৫২ ফুট উঁচু পাঁচ তলা ভবনের সমান স্থাপনা নির্মাণ করার কথা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার খায়রুল বাশার জানান, প্রকল্পগুলো শেষ করতে তারা অর্থের সংস্থানে নেমেছেন। রাজশাহীর ভাষাসৈনিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ মাস আগে ‘দেশের প্রথম শহীদ মিনার’-এর জায়গাটিতে নতুন করে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু হয়। সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ওই নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এজন্য ৫০ লাখ টাকাও সরকারিভাবে বরাদ্দ হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ শহীদ মিনারের যেটুকু কাজ হয়েছে, তা মাটির নিচেই।

 প্রায় দুই বছরে কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।

দেশের প্রথম শহীদ মিনারটি স্থাপিত হয়েছিল রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাস চত্বরে। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় এখনো রাজশাহীতে যাঁরা বেঁচে আছেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, দেশের প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে এটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নতুন করে সেই শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর আগে ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রথম শহীদ মিনারের স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি ‘শ্রদ্ধাস্মারক’ ফলক স্থাপন করেছিলেন। সিটি করপোরেশন সূত্র জানান, গত বছরের জুনে কাজ শেষ করার কথা ছিল। জায়গা সংকটের কারণে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। নকশাও পাল্টাতে হয়েছে। তাই দেরি হচ্ছে।

নির্মাণকাজে বিলম্বের বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশন কাজটি করছে। কিন্তু এখন একদম বন্ধ। কেন বন্ধ কিছুই বলেননি তারা। আমার মেয়াদে শহীদ মিনারের কাজটি শেষ করতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু সে সম্ভাবনাও নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর