বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়

দরপত্র কিনতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনালাপ করানো হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন অফিসে ওষুধ এবং মেডিকেল সরঞ্জামাদি সরবরাহের (এমএসআর) প্রায় সোয়া কোটি টাকার ছয় গ্রুপ কাজের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্‌বান করা হলেও দরপত্র (শিডিউল) না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আগ্রহী ঠিকাদাররা সরকারি চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দরপত্র আনতে গেলে সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জহিরউদ্দিন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে তাদের বিদায় দেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত বরিশালের এক ঠিকাদারকে ওই ছয় গ্রুপ কাজ পাইয়ে দিতে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা দরপত্রে অংশগ্রহণেচ্ছু ঠিকাদারদের দরপত্র না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে বিদায় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আগ্রহী ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা উন্মুক্ত দরপত্র আগ্রহী সবার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস। ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে সদর হাসপাতাল ও কীর্তিপাশা ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য ওষুধ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, লিনেন সামগ্রী, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেমিক্যাল রি এজেন্ট ও আসবাবপত্র (কিচেন সামগ্রী) সরবরাহের লক্ষ্যে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘আমাদের নতুন সময়’ পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গতকাল সকালে সরকারি চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বরিশালের এক ঠিকাদার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জহিরউদ্দিনের কাছে যান।

ঠিকাদার প্রতিনিধি আবদুল হালিম জানান, ব্যাংক চালানের কপি দিয়ে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে দরপত্র চাইলে তিনি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ‘বারণ আছে’ বলে জানান। তৎক্ষণাৎ জহিরউদ্দিন ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ফোনে ধরিয়ে দেন। ওই নেতা তাকে বাসায় ডেকে নেন। এ সময় এসএমআর সরবরাহের কাজটি বরিশালের এক ঠিকাদারের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তাকে দরপত্র না নিতে অনুরোধ করেন।

পরে আবদুল হালিম সিভিল সার্জনের কাছে গেলে তিনি আগ্রহী ঠিকাদারকে দরপত্র দেওয়ার জন্য প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ‘ক্যাশিয়ার নেই’ অজুহাতে তারপরও ঠিকাদার প্রতিনিধিকে দরপত্র দেননি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।

এর আগে আগ্রহী আরও কয়েকজন ঠিকাদার এমএসআর সরবরাহ কাজের দরপত্র কিনতে গেলে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা তাদেরও একইভাবে ওই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে বিদায় দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জহিরউদ্দিন মুঠোফোনে জানান, স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা দরপত্র বিক্রি করতে তাকে নিষেধ করেছেন। তার কিছু করার নেই।

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, আগ্রহী সব যোগ্য ঠিকাদার দরপত্র কিনতে পারবেন। দরপত্র না দেওয়ার কোনো বিধান নেই।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, উন্মুক্ত দরপত্র মানে সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে আগে থেকে ঠিকাদার নির্ধারণ করে রাখার কোনো বিধান এবং সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর