শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত নেপালের

কাগজ সিমেন্ট তৈরি পোশাকে শুল্ক সুবিধা চায় বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভুটানের পর এবার বাংলাদেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল। প্রস্তাবিত এই চুক্তিতে কাগজ, সিমেন্ট তৈরি পোশাকসহ ১৪০ পণ্যে শুল্ক সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। অপরদিকে ২০ পণ্যে শুল্ক সুবিধা ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে সৈয়দপুর থেকে সরাসরি আকাশপথে যোগাযোগ এবং নিজেদের জলবিদ্যুৎ ও ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশি বিনিয়োগ চেয়েছে নেপাল। গতকাল দুই দেশের মধ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের এক সভায় পিটিএ করার বিষয়ে উভয় দেশ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ৩০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, অপরদিকে নেপালের ১৮ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির সরকারের শিল্প, বাণিজ্য ও সরবরাহ সচিব ড. বৈকুণ্ঠ আড়িয়াল। ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে করণীয় নির্ধারণে এই সভায় জোর দেওয়া হয়েছে। এতে উভয় দেশই অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এ ছাড়া নেপাল বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে।

তারা সৈয়দপুর বিমানবন্দর দিয়ে বিরাটনগর ও ভদ্রাপুর পর্যন্ত বিমান যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। আমরা এ বিষয়ে তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) চেয়েছি।

সচিব জানান, নেপাল ট্রানজিট সুবিধার পাশাপাশি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তাঁদের জলবিদ্যুৎ ও ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশি বিনিয়োগ চেয়েছে। আমরা বলেছি, জলবিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ করছে। আর ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পর্যটন বিকাশেও আলোচনা হয়েছে বলে সচিব জানান।

যা চেয়েছে বাংলাদেশ : সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মার্চে দুই দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ সচিব পর্যায়ের সভায় অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। এবারের সভায় উভয় দেশ চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে বাংলাদেশ ৬ ডিজিটের ১৪০টি পণ্যের তালিকা নেপালের কাছে হস্তান্তর করেছে শুল্ক সুবিধার জন্য। এর মধ্যে প্রধান পণ্যগুলো হচ্ছে- তৈরি পোশাক, সেনিটারি টাওয়েল, মোটরসাইকেল, জার্সি, পুলওভার, বেবি গার্মেন্টস, প্রিন্টেড ওভেন কটন ফেব্রিক্স, টয়লেট পেপার, রোলস টিস্যু, পেপার অ্যান্ড পেপার বোর্ড, সিমেন্ট, হ্যান্ডসব্যাগ, চুইংগাম, সুগার কনফেকশনারি, হাউজহোল্ড অ্যান্ড ট্রয়লেট আর্টিকেল, মিক্সার অব জুস, বিস্কিটস, ব্রেড, পাস্তা ইত্যাদি। এ ছাড়া নেপালে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য অ্যারাইভাল ভিসা চালু থাকলেও বিনিয়োগকারীদের ৫ লাখ রুপি দিতে হয়। এই বৈষম্য দূর করে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। নেপালে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে উচ্চ মাশুল ও অশুল্ক বাধা দূর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

নেপালের চাওয়া : প্রস্তাবিত পিটিএ-তে শুল্ক সুবিধার জন্য অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ২০টি পণ্যের তালিকা হস্তান্তর করেছে নেপাল। এর মধ্যে কৃষিপণ্য, পশমি শাল, চাদর, হ্যান্ডি ক্রাফটস, ভেষজ ওষুধ ও ঝাড়– অন্যতম। পাশাপাশি রোহানপুর ও সিঙ্গাবাদ দিয়ে রেলপথে ট্রানজিট সুবিধায় পণ্য পরিবহনের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি। একই সঙ্গে নেপালি পণ্য পরিবহন সুবিধার জন্য বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে কোয়ারেন্টাইন এবং টেস্টিং সুবিধাসহ অবকাঠামো উন্নত করতে বলেছে দেশটি। নেপাল বলেছে, বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে তারা আদার ডিউটিজ অ্যান্ড চার্জেস এর সমস্যায় পড়েন। এ ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি। দুই দেশের মধ্যে ডাবল ট্যাক্সেশন এড়ানোর জন্য একটি চুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর