শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বানভাসিদের আতঙ্ক এখন নদী ভাঙন

দেড় ঘণ্টায় বিলীন দেড় শ বাড়ি দিশাহারা কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বগুড়ায় করতোয়া ছাড়া দেশের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। তবে দুশ্চিন্তা কমেনি বানভাসীদের। কমেনি ভোগান্তি। ঘরে নেই খাবার, চরম সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের। ফসল নষ্ট হওয়ায় আগামী দিন কীভাবে চলবে সেই চিন্তায় দিশাহারা কৃষক। এর মধ্যে বন্যাদুর্গত নদীতীরবর্তী এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে হাজির হয়েছে নদীভাঙন। মুহূর্তে আমির থেকে ফকির হচ্ছে অনেক পরিবার। গত বুধবার দেড় ঘণ্টায় যমুনার গর্ভে হারিয়ে যায় সিরাজগঞ্জের একটি এলাকার দেড়শ বাড়িঘর। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকালে শুধু বগুড়ার চক রহিমপুরে করতোয়ার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দেশের সব নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। করতোয়ার পানিও গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ সেন্টিমিটার কমেছে যা অব্যাহত থাকবে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, বন্যার পানি নামলেও ঘরবাড়িতে রয়েছে বন্যায় ভেসে আসা বর্জ্য। দীর্ঘদিন টিউবওয়েল ডুবে থাকায় বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথম দুই দফা বন্যায় সরকারি ত্রাণ মিললেও বর্তমানে খাদ্য সংকটে ভুগছে অধিকাংশ বানভাসি পরিবার। কাদা-পানিতে দীর্ঘদিন থাকার ফলে অনেকের হাত-পায়ে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। মিলছে না পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও ওষুধ। দফায় দফায় বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের নিচের অংশ। হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় বানভাসি মানুষগুলো ঘর মেরামত করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে নদ-নদীর পানি কমতেই তীব্র নদীভাঙন শুরু হওয়ায় ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। সিরাজগঞ্জ : জেলার সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আবদুস ছামাদ ভূঁইয়ার বাড়িঘর  কেড়ে নিয়েছে যমুনার ভাঙন। গত বুধবার মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ওই এলাকার দেড়শ বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে ছামাদ ভূঁইয়া এখন নদীর ধারে হাঁউমাউ করে কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন। মাঝে মাঝে ক্ষোভের সুরে বলছেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণেই আজ সব হারিয়ে আমি পথের ফকির।’ গত তিন মাসে সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী গ্রামে তিন দফা ভয়াবহ ভাঙনে প্রায় সহস্রাধিক কাঁচা-পাকা বসতভিটা, মসজিদ, গাছপালা বিলীন হয়েছে। এসব মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এছাড়াও পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এনায়েতপুর ও চৌহালীতেও তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। পাঁচঠাকুরী গ্রামের মাওলানা ফজর আলী বলেন, সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করে বসতভিটা তৈরি করেছিলাম। সব গেল যমুনার পেটে। এখন দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। তবে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, আতঙ্কের কিছু নেই। জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। কুড়িগ্রাম : নদীভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। অন্যের জমিতে, বাঁধে, সড়কে আশ্রয় নিয়েছে ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলো। ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের ৬৩টি পয়েন্টে প্রচ  নদীভাঙন চলছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙার পাটেশ্বরীতে ও হলোখানার চর সুভারকুটিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। লালমনিরহাট : ফসল নষ্ট হওয়ায় লালমনিরহাটের কৃষকদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। কয়েক দফা বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় অনেকেই ধারদেনা করে আবার আবাদ করেছিলেন। অতিবৃষ্টি ও পঞ্চম দফা বন্যায় সেই ফসলও  নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কীভাবে ধার শোধ করবেন, কী খাবেন- এই দুশ্চিন্তায় দিশাহারা কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বছর জেলার ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমির আমন ধানের খেত বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। ১৬২ হেক্টর জমির ফসল পলি পড়ে নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ৩৮৫ হেক্টর জমির আগাম শীতকালীন ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি আমন খেত ডুবে আছে তিন হাজার হেক্টরের বেশি।

বগুড়া : বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চলের ঘাস নষ্ট হওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই গরু-ছাগলকে খাওয়াতে জমির কাঁচা ধান কেটে ফেলছে। কৃষকরা বলছেন, ১০-১৫ দিন পানিতে ডুবে থেকে এমনিতেই অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ধান রাখলেও কতটা টিকবে বলা যায় না। খাবারের অভাবে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর