শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে সাইবার অপরাধের ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক

লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত এই চক্র

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সাইবার অপরাধীরা। ফেসবুক হ্যাক, ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি দিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এ রকম সাইবার অপরাধীদের ছোট-বড় অনেক নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সাইবার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। নানা কৌশলে তারা বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এ রকম একটি প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে আটকের পর সাইবার অপরাধীদের ব্যাপারে অনেক নতুন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। জানতে পেরেছে কীভাবে তারা মানুষকে বোকা বানিয়ে ও জিম্মি করে টাকা আদায় করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সিলেটের এক প্রবীণ সাংবাদিক ও তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। গত সপ্তাহে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক নার্সের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তার পরিচিতজনদের কাছ থেকে প্রতারকরা টাকা আদায় করেন। সিলেটে প্রতিদিনই এ রকম সাইবার ক্রাইমের ঘটনা ঘটছে। এ রকম সাইবার অপরাধীদের একটি দলের সন্ধান পায় র‌্যাব। পরে বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ওই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও গ্রামের মিরাশ আলীর ছেলে মো. মামুন মিয়া ও একই উপজেলার গোপালপুরের বশির উদ্দিনের ছেলে আফজাল হোসেন। তাদের আরেক সহযোগী দোয়ারাবাজার উপজেলার বদরপুরের মো. তফসির উদ্দিনের ছেলে জাবের আহমেদ পলাতক        রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে র‌্যাব অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সিলেট শহর ও সুনামগঞ্জে অবস্থান করে এই চক্রটি মানুষের ফেসবুক হ্যাক করে অর্থ আদায় করতেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে। র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, প্রতারক চক্রটির প্রধান মামুন মিয়া। ইউটিউবে ভিডিও দেখে সে ফেসবুক হ্যাক করা রপ্ত করে। এরপর সহযোগী হিসেবে নেয় তার বন্ধু আফজাল ও জাবেরকে। তিন বন্ধু মিলে প্রবাসী, বিত্তবান ও সমাজের নামিদামি মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতেন। এরপর ওই ব্যক্তির ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় থাকা লোকজনের কাছে নানা অজুহাতে টাকা চাইতেন। কখনো বিপদের কথা বলে, আবার গরিব-অসুস্থ লোকদের সাহায্যের কথা বলে তারা টাকা আদায় করতেন। কারও কারও অ্যাকাউন্টের ম্যাসেঞ্জার থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতেন তারা। এভাবে প্রতি মাসে তারা দেড় থেকে দুই লাখ টাকা রোজগার করতেন। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধীরা জানিয়েছে, স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার লোভ থেকে তারা সাইবার ক্রাইমের পথ বেছে নিয়েছেন। র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি ওবাইন জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই চক্রটি সাইবার ক্রাইম করে আসছেন। গত ৮ মাস ধরে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করে আসছিলেন। এভাবে তারা প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা রোজগার করতেন। বিলাসী জীবনযাপন ও স্বল্প সময়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার স্বপ্নে তারা অপরাধ জগতে পা রাখেন। মিডিয়া কর্মকর্তা ওবাইন আরও জানান, সিলেটে সাইবার ক্রিমিনালদের এ রকম আরও নেটওয়ার্ক রয়েছে। এসব নেটওয়ার্কের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর