রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

যে কারণে পদোন্নতি হচ্ছে না কারা কর্মকর্তাদের

১০ বছর বন্ধ জ্যেষ্ঠতার তালিকা হালনাগাদ

আনিস রহমান

মজিবর রহমান চাকরিজীবনের শেষ ১০ বছর জেল সুপার হিসেবে চাকরি করে চলতি বছরের মার্চ মাসে অবসরকালীন ছুটিতে গেছেন। দীর্ঘদিন জেল সুপার পদে চাকরি করেও তিনি সুপারের কোনো সুযোগ সুবিধা পাননি। পাচ্ছেন জেলারের সুবিধা। শুধু মজিবর নন, কামরুল ইসলামসহ আরও অনেকেই কারা অধিদফতরের জেল সুপার পদে দীর্ঘদিন চলতি দায়িত্ব পালন করে অবসরে গেছেন। জ্যেষ্ঠতা তালিকা হালনাগাদ না করায় কারা অধিদফতরের পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে প্রায় ১০ বছর ধরে। অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারের অধিকাংশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, বিভাগীয় মামলা, দ-সহ অনেক জটিলতা রয়েছে। যার কারণে পদোন্নতি হচ্ছে না কারা কর্মকর্তাদের। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন কারাগারে জেলার, জেল সুপার, সিনিয়র জেল সুপার পদে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিয়ে চলতি দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে সিনিয়র জেল সুপার পদে। সারা দেশের ৬৮টি কারাগারের জন্য সিনিয়র জেল সুপার পদ আছে ১২টি। এর মধ্যে নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একজন। শূন্য পদ রয়েছে ১০টি। একটি পদে একজনকে দেওয়া হয়েছে চলতি দায়িত্ব। একইভাবে জেল সুপারের পদ আছে ৫৬টি। নিয়মিত দায়িত্বে আছেন ৪৭ জন। একজন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে চলতি দায়িত্ব। পদ শূন্য আছে ৯টি। জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা বিভাগে প্রায় ১০ বছর ধরে আটকে আছে কেন্দ্রীয় কারাগারসমূহে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদোন্নতি। ফলে বর্তমানে এ পদে দায়িত্বরতরা ১০ বছর ধরে কাজ করে গেলেও স্থায়ীভাবে তাদের পদোন্নতি না দিয়ে চলতি দায়িত্বে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচজন সিনিয়র জেল সুপার চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। কারা অধিদফতর বা সেবা ও সুরক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। জেল সুপাররা বলছেন, কারা প্রশাসনের ন্যায় স্পর্শকাতর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে কোনো সময় বিপদের সম্মুখীন হলে (বিভাগীয় মামলা বা শাস্তি) পদোন্নতি পদ হতে স্থায়ী ভাবে বঞ্চিত হতে হবে। জানা গেছে, সম্প্রতি কামরুল ইসলাম নামক একজন জেল সুপার পদোন্নতির আশায় সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও কারা অধিদফতরের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন এবং পিআরএল-এ গেছেন। বর্তমানে ১২টি কেন্দ্রীয় কারাগারের বিপরীতে শুধু একজন নিয়মিত সিনিয়র জেল সুপার কর্মরত আছেন। এতে চলতি দায়িত্বে কর্মরতদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সম্প্রতি তিনজন কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হলেও স্থায়ী পদোন্নতির কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

জেল সুপারদের মধ্যেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ৪-৫ বছর ধরে চলতি দায়িত্বে¡ থাকলেও জ্যেষ্ঠতা তালিকা হালনাগাদ না করায় স্থায়ী বা নিয়মিত পদোন্নতি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। বিতর্কিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা দিয়ে পদোন্নতি/চলতি দায়িত্বে জেল সুপার পদায়ন করার কারণে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তাদের অধীনে সিনিয়রদের কাজ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না পেয়ে দীর্ঘদিন চলতি দায়িত্বে থেকেই তিনজন জেল সুপার পিআরএল-এ গেছেন।

জ্যেষ্ঠতা তালিকা হালনাগাদ না থাকায় ১০ বছর ধরে জেলার/ডেপুটি জেলাররা একই পদে কর্মরত থাকলেও যোগ্যতা এবং পদ খালি থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন। সম্প্রতি কয়েকটি কারাগারের জেলার ও জেল সুপারের পদ খালি সাপেক্ষে পদোন্নতির জন্য প্রক্রিয়া শুরুর খবর শুনে এ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।

জানা যায়, ২০১১ সালের জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা অনুযায়ী ২০১৮ সালে একটি খসড়া জ্যেষ্ঠতা তালিকা সবার মতামত গ্রহণপূর্বক প্রস্তুত করে সেবা ও সুরক্ষা বিভাগে পাঠানো হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগের ২০১৮ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটির আলোকে প্রস্তুত না করায় তা ফেরত দেওয়া হয়। এরপর সেটি এখন পর্যন্ত সেবা ও সুরক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, কারা অধিদফতরের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে খসড়াটি পাঠানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে বঞ্চিত সব সিনিয়র জেল সুপার, জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন জানান, পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা সময় বেশি লাগলেও জেল কোড, কমন নিয়োগ বিধির আলোকে জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করতে আইন, নীতিমালা নিয়োগ বিধি, বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা, শাস্তি এসব বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। এ কারণে কিছুটা সময় প্রক্ষেপণ হচ্ছে।

আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সুরক্ষা) বেলায়েত হোসেন জানান, অধিকাংশ কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত বেশি অভিযোগ যে তাদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর