মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিনামূল্যে কবর নয় দক্ষিণ সিটিতে

দাফনে দেড় থেকে ৫০ হাজার, কবর সংরক্ষণে ফি পাঁচ থেকে ২০ লাখ টাকা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিনামূল্যে কবর নয় দক্ষিণ সিটিতে

মৃতদেহ দাফনের ওপর মোটা অঙ্কের ফি নির্ধারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিনা খরচে আর কাউকেই কবর দেওয়া যাবে না ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন কবরস্থানে। গত দুই বছরে বিনামূল্যে ২০ হাজারের বেশি মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। তবে এখন থেকে প্রতিটি মৃতদেহ দাফন করতে সর্বনি¤œ দেড় হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হবে নিহতের স্বজনদের। আর কবর সংরক্ষণে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে। জানা যায়, ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন আজিমপুর, জুরাইন ও খিলগাঁও কবরস্থান রয়েছে। সম্প্রতি কবরস্থান পরিচালনার নতুন নীতিমালার আলোকে মৃতদেহ দাফনের ওপর ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার থেকে ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন সব কবরস্থানে মৃতদেহ দাফনে তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় শুরু হয়। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দাফন করতে আসা স্বজনদের মধ্যে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ও দুঃশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র মানুষের মধ্যে। ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন কবরস্থান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে নির্ধারিত ফি পরিশোধ ছাড়া এখন আর তাদের পক্ষে মৃতদেহ দাফন করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আজিমপুর পুরনো কবরস্থানের সহকারী মোহরার নুরুল হুদা বলেন, মৃতদেহ দাফনে ডিএসসিসির নির্দেশনার পর মৃতের পরিবার থেকে ফি আদায় শুরু হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়, এখন থেকে প্রতিটি মৃতদেহ দাফন বাবদ ১ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া দাফনের জন্য কবর খনন, বাঁশ ও চাটাই বাবদ বড় কবরের জন্য ১ হাজার ৯২, মাঝারি কবরের জন্য ৭৭৭ এবং ছোট কবরের জন্য ৪৬০ টাকা ৯৫ পয়সা পরিশোধ করতে হবে। এতে আরও বলা হয়, এখন থেকে মৃতদেহ দাফনের জন্য অগ্রিম কবর কিংবা কবরের জায়গা সংরক্ষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। আগে সংরক্ষিত কোনো কবরে যদি মৃতদেহ দাফন করতে হয় তাহলে মৃতের স্বজনদের ৫০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। এসব কবরে মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, ভাই, বোন, পুত্র কন্যা ছাড়া অন্য কাউকে দাফন করা যাবে না। এর আগে সংরক্ষিত কবরে মৃতদেহ দাফনের ফি ছিল ১৫ হাজার টাকা। ২০১৪ সালের আগে এ ফি ছিল মাত্র তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া কেনা কবর সংরক্ষণের জন্যও মোটা অঙ্কের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ বছর কবর সংরক্ষণ রাখার জন্য পরিশোধ করতে হবে ৫ লাখ, ১৫ বছরের জন্য ১০ লাখ, ২০ বছরের জন্য ১৫ লাখ ও ২৫ বছর সংরক্ষণের জন্য দিতে হবে ২০ লাখ টাকা। এর আগে এ ফি ছিল যথাক্রমে ৩ লাখ, ৬ লাখ, ৯ লাখ ও ১২ লাখ টাকা।

ডিএসসিসির এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আজিমপুর কবরস্থানে মৃতদেহ দাফন করতে আসা স্বজনরা। তারা বলেন, আজিমপুর কবরস্থানে মৃতদেহ দাফন করতে কোনো অর্থ লাগে না এতদিন ধরে তারা এটাই জানতেন। কবর দিতে এসে জানতে পারলেন ফি দিতে হবে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই তখনকার মেয়র সাঈদ খোকন সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন ডিএসসিসি এলাকায় মৃতদেহ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দাফন এবং শ্মশানঘাটে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা যাবে। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই ডিএসসিসির বোর্ডসভায় নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস কাউন্সিলরদের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ চান। এর ওপর ভিত্তি করে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ২০১৩-১৪ সালের নীতিমালা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। আর কবরস্থানের ওপর চাপ কমাতে সংরক্ষণ ফি বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর