বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বাড়ছেই

ড্রেনে পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার হচ্ছে নদী দূষণ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

পলিথিন ও প্লাস্টিকের ক্ষতির কথা ভেবে দেশে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। শাস্তির বিধান রেখে আইনও করা হয়। তখন বিকল্প হিসেবে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় সেই পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার থামানো যায়নি। কিছুদিন পর বাজারে আবার পলিথিন চলে আসে। দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজারে পলিথিনের আধিপত্য চরম পর্যায়ে। ফলে বাড়ছে রোগব্যাধি, অকাল মৃত্যু। হুমকিতে জনস্বাস্থ্য। এ ছাড়া পলিথিন ড্রেনে পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। মাটির উর্বরা শক্তি কমছে। নদীতে গিয়ে হচ্ছে দূষণ। পলিথিন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনিবার্য অংশ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজারে পণ্য বিক্রিতে প্রায় শতভাগ ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর পলিথিন। চাল, ডাল, তেল, সবজি বিক্রিতে ব্যবহার হচ্ছে পলিব্যাগের। এমনকি পলিথিন ব্যাগে করে খাবার আনা-নেওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে গরম খাবার বহন করা, ফ্রিজে পণ্য রাখতেও ব্যাপকভাবে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ফলে পলিথিনের ব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বহুদিন আগেই। জানতে চাইলে নগরবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ক্ষতিকর পলিথিন। কিন্তু এর ব্যবহার হচ্ছেই। এটা খুবই খারাপ। প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে যেমন কঠোর হতে হবে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, মানবদেহের ক্ষতি ছাড়াও পলিথিন নদীতে যাচ্ছে। ড্রেনে যাচ্ছে। জমিতে যাচ্ছে। এখন সমুদ্রেও যাচ্ছে। পলিথিেেনর কারণে কোথাও আজ নিরাপদ নয়। শক্তহাতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার রোধ করতে হবে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা কামাল বলেন, বাজারে পাটের ব্যাগ পাওয়া যায় না, কাপড়ের ব্যাগের দাম বেশি। পলিথিনের দাম কম, বহনে সহজ তাই ব্যবহার বেশি। পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। শফিক নামে ওই বাজারের এক ক্রেতা বলেন, দোকানিরা পলিথিন ব্যাগ দেন। আমরা ব্যবহার করছি। ক্ষতির দিকটা ভাবী না।  বাজার পলিথিনে সয়লাব, নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। শুধু কারওয়ান বাজার নয় রাজধানীর প্রতিটি বাজার, মুদি দোকানে প্রকাশ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বলছে, শুধু ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যাগ জমা হচ্ছে।

 আর বিশ্বে প্রতি বছর ৫ লাখ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। পলিথিনের বহুবিধ ব্যবহারের কারণে মানবদেহে বাসা বাঁধছে ক্যান্সার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলের হরমোন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে দেখা দিতে পারে বন্ধ্যত্ব, নষ্ট হতে পারে গর্ভবতী মায়ের ভ্রƒণ, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক বা পলিথিনে গরম পানি বা গরম খাবার ঢালার সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিসফেলন-এ তৈরি হয়। বিসফেনল-এ থাইরয়েড হরমোনকে বাধা দেয়। বাধাপ্রাপ্ত হয় মস্তিষ্কের গঠনও। গর্ভবতী নারীদের রক্ত থেকে বিসফেনল-এ যায় ভ্রƒণে। ফলে নষ্ট হতে পারে ভ্রƒণ, দেখা দিতে পারে বন্ধ্যত্ব। শিশুও হতে পারে বিকলাঙ্গ। তা ছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ১০ কারণের মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিকের ব্যবহার। এ ছাড়া পলিথিনের বহুবিধ ব্যবহারে বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। পলিথিনে শুধু গরম খাবার বা গরম পানির ব্যবহারেই ক্ষতি হয় না, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি বা হিমায়িত (ফ্রিজিং) পানির ব্যবহারেও ক্ষতি হয় সমানভাবে। পলিথিনে মুড়িয়ে ফ্রিজে রেখে সেই খাবার গ্রহণ করলেও সমান ক্ষতি হয়।

ক্যান্সারসহ নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে শরীরে। হচ্ছে অকাল মৃত্যু।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহার করা মানে বিপদ ডেকে আনা। প্লাস্টিক শরীরে ক্যান্সার তৈরি করার প্রথম ১০টি কারণের মধ্যে একটি। সব প্লাস্টিকই ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। পলিথিনে খাবার বহন কিংবা ফ্রিজে রাখা একই কথা। সবই ক্ষতিকর। প্লাস্টিক খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এতে কিডনি ড্যামেজ, লিভার অকেজো, বন্ধ্যত্ব ও ভ্রƒণ নষ্ট হতে পারে, এটা ব্যবহারের ঘনত্বের ওপর নির্ভর করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর