শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

যাত্রীবেশে বাসভর্তি ডাকাত

খুনের তদন্তে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাতের সড়কে যাত্রীবোঝাই বাসে উঠতে মনে শঙ্কা জাগবে না বেশির ভাগ মানুষের। কিন্তু এসব যাত্রীর বেশির ভাগ যদি হয় ডাকাত! তাহলে? রাস্তা থেকে যাত্রী উঠিয়ে বাসভর্তি ওই সব ডাকাত কেড়ে নিত সবকিছু। এরপর নামিয়ে দিত নির্জন স্থানে। ক্রাইম প্যাট্রোলের আদলে এভাবেই ডাকাতি করে আসছে একটি চক্র। সম্প্রতি একটি হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনে এমনই দুর্ধর্ষ এক ডাকাত দলের কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ৫ অক্টোবর সাভারের বলিয়ারপুর থেকে হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের (৪১) লাশ উদ্ধার হয়। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (পিবিআই)। তদন্তের একপর্যায়ে স্থানীয় সোর্স এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিবিআই নিশ্চিত হয়, বাস ডাকাত দলের হাতেই প্রাণ হারিয়েছেন রবিউল। ১৩ অক্টোবর ঢাকার সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয় ডাকাত দলের নেতা বাছির মোল্লাকে। এরপর তার দেওয়া তথ্যে এই চক্রের আরও আট সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের চক্রে মোট ১৮ জন কাজ করত বলে জানতে পেরেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। গতকাল পিবিআইর সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বাছির ২০১৭ সালে সড়ক ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় কারাগারে ছিলেন। এর আগেও তিনি সিরাজগঞ্জে ডাকাতি করেছেন। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এভাবেই ডাকাতি করে আসছেন তারা। ভারতীয় টেলিভিশন সিরিজ ক্রাইম প্যাট্রোল দেখে যাত্রীবেশে ডাকাতিতে উৎসাহিত হওয়ার কথাও স্বীকার করেছে অপরাধীরা। এই চক্রের পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বাছির ও তার চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও হেলপারের কাজ করে। পাশাপাশি তারা বাস ভাড়া নিয়ে তাতে স্টিকার পরিবর্তন করে রং দিয়ে বিভিন্ন রুটের নাম লিখে দলবল নিয়ে নানা এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল।

তাদের মধ্যে কেউ চালক, হেলপার ও কন্ডাকটর হয়। আর বাকিরা যাত্রী সেজে বসে থাকে। অভিনব কায়দায় রাস্তা থেকে যাত্রী তুলে বাসের মধ্যে তাদের মারধর করে টাকা-পয়সা, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর চলন্ত বাস থেকে যাত্রীদের রাস্তায় নির্জন স্থানে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ অক্টোবর চক্রটি টাঙ্গাইল রুটের নিরালা পরিবহনের একটি বাস কুয়াকাটা যাওয়ার কথা বলে তিন দিনের জন্য রিজার্ভ ভাড়া নেয়। বাস নিয়ে তারা মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ীতে ডাকাতি শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ৫ অক্টোবর সাভারের নবীনগরে রবিউলকে যাত্রী হিসেবে ওঠায়। বাসের ভিতরে ডাকাতি করার সময় চিৎকার ও ধস্তাধস্তি করলে চক্রের অন্যরা রবিউলকে চেপে ধরে। এ সময় বাছির মোল্লা বাসের ভিতরে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলের অ-কোষে জোরে আঘাত করলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এরপর রবিউলের ফোন দিয়ে স্বজনদের তার খুন হওয়ার বিষয়টি জানায় তারা। তাকে হেমায়েতপুরে ফেলে দেওয়া হবে জানিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয় ডাকাতরা। ১৪ অক্টোবর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাছির।

এ ঘটনায় গ্রেফতার অন্যরা হলেন শেখ হাফিজ, আনোয়ার হোসেন, আমির হোসেন, আল আমিন, জুয়েল, নঈম, তপন ও নাজমুল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর