শিরোনাম
শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

আলুর দাম নিয়ে নতুন কারসাজি

হিমাগার থেকে না তুলে কৃত্রিম সংকট তৈরি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

আলুর দাম নিয়ে নতুন কারসাজি

প্রশাসনের জোরদার মনিটরিং ও নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বাজারে প্রভাব নেই গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় সবজি আলুর দামের। আগের মতোই ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। বাজারের অনেক আড়ত ফাঁকা হয়ে আছে হিমাগার থেকে আলুর সরবরাহ না থাকায়। বাজার মনিটরিং, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সবই হচ্ছে। কিন্তু কারসাজি বন্ধ করতে না পারায় দামে প্রভাব পড়ছে না। দাম নিয়ে সরকারি ঘোষণা থেকেছে কেবল কাগজে। বাজারে থলে হাতে এসে আলুর দাম শুনে তাই ক্ষুব্ধ ক্রেতা। হিমাগারে সংরক্ষণে রাখা আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ছয় বছর তারা লোকসান দিয়েছেন। এ কারণে এবারের সুযোগটি কাজে লাগাতে চান। বিগত বছরগুলোর লোকসান তুলতে চান। সাহেববাজার মাস্টারপাড়ার খুচরা সবজি ব্যবসায়ী জামাল জানান, বুধবার থেকে আড়তগুলোয় হঠাৎ আলুর সরবরাহ কমে গেছে। আড়তদাররা এ নিয়ে কিছু বলছেন না। তবে নানা মুখে শোনা যাচ্ছে- কোল্ড স্টোরেজ থেকেই আলু ছাড়া হচ্ছে না। বুধবার থেকে পাইকারি আড়ত থেকে তিনি কেজিপ্রতি ৪০-৪২ টাকা দরে আলু কিনছেন। বিক্রি করছেন ৪৫-৪৮ টাকায়। শুক্রবার ৩৮ টাকায় কিনে বিক্রি করেছেন ৪০ টাকায়। তবে দাম আড়তে বেশি নেওয়ায় কেনার স্লিপ দেওয়া হয়নি খুচরা বিক্রেতাদের। রাজশাহীর পবা উপজেলার সরকার কোল্ড স্টোরেজে গিয়ে দেখা যায়, আলু ব্যবসায়ী ও কৃষক দল বেঁধে বসে আছেন। তারা জানান, সরকার-নির্ধারিত দামে তারা আলু বিক্রি করতে রাজি নন। কারণ হিসেবে বলেন, গত ছয় বছর আলুতে যে লোকসান হয়েছে এবার তা পুষিয়ে নিতে চান। পবার কৃষক রজব আলী জানান, প্রতি বিঘায় এবার আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে ৪২ হাজার টাকা। যেখানে তারা ৬৫ থেকে ৭০ মণ আলু পেয়েছেন। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে গড়ে খরচ পড়েছে ১৫ টাকা। মার্চে তারা আলু জমি থেকে তুলে কোল্ড স্টোরেজে রাখা শুরু করেন। এখন শ্রমিক খরচ ও কোল্ড স্টোরেজ খরচ যোগ দিয়ে তাদের প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়ছে ২২ টাকা। এবার আলুর দাম ভালো পাওয়ায় গত ছয় বছরের সে ক্ষতি তারা এ বছর পুষিয়ে নিতে চান। কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রেখে ব্যবসা করছেন নওহাটা পৌরসভার সাব্বার আলী। তিনি জানান, সব খরচ বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি তার আলু কেনা পড়েছে ২১ টাকা। তিনি নিজের সঞ্চয়ের পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ মালিক পক্ষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আলুর ব্যবসা করেন। গত ছয় বছরে যে ক্ষতি হয়েছে তা এবারে পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ এসেছে; যা তিনি হাতছাড়া করতে চান না। এ কারণে তারা কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু ছাড়া বা বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসককে বাজার মনিটরিং করতে চিঠি দেওয়ার পরও তার প্রভাব নেই বাজারে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই আলুর দাম স্বাভাবিক হবে। রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, সরকার-নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে হিমাগারগুলোয় অভিযান চালানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদেরও সচেতন করা হচ্ছে। রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদফতরের বিভাগীয় উপপরিচালক তাছলিমা খাতুন জানান, বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে।

শিগগিরই আলুর দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর